সবজি সহ ডিম-মুরগি-মাছের দামে স্বস্তি
প্রকাশ : ৩১-১০-২০২৫ ১৩:১৩
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকা কেজির কমে কোনো সবজি মিলতো না। তবে বাজারে এখন সবজির দামে ততটা অস্বস্তি নেই। শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় দামও অনেকটাই কমেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
দুই সপ্তাহ আগে ১৫০ টাকায় ওঠা ডিমের ডজন কয়েক দফা কমে ১৩০ টাকায় নেমেছে। দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিরও। আর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ শুরু হয়েছে এ সপ্তাহে। তবে ইলিশের দাম এখনো চড়া।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে বিক্রেতারা বলছেন, বিশেষ করে শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমার কারণে অন্য সবজির দামও কমতির দিকে। এর প্রভাবে ডিম ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন শীতের আগাম শিম প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকায় মিলছে, যা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি মিলছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। মুলার কেজি ৪০-৬০ টাকা।
এ ছাড়া আলু ২০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ও কচুর মুখি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন, করলা, বরবটি, কচুর লতি ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও কমে ১০০ টাকার মধ্যে এসেছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এ দাম কিছুটা বেশি।
এদিকে, ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে এ মাছের বিক্রি শুরু হয়েছে পাঁচদিন আগে। তবে দাম আগের মতোই চড়া। রামপুরা বাজারে ৩০০-৪০০ গ্রামের ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। আর ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। বাজারে অন্যান্য মাছের দামও আগের কয়েক সপ্তাহের মতোই চড়া।
সবজির দাম কমার ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে ডিম ও মুরগির বাজারে। গত সপ্তাহে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে কমবেশি ১৪০ টাকা দরে। ডজনে ১০ টাকা কমে এখন বড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে এখনো ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দামেই সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আগের দরেই বেচাকেনা হচ্ছে গরুর মাংস, প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা।
পেঁয়াজের বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশি পেঁয়াজেই চলছে বাজার। ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
দেশি মসুর ডালের দাম আগের মতো ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও আমদানি করা মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায়। চিনির বাজারেও কিছুটা ভালো খবর রয়েছে। প্রতি কেজি চিনি কেনা যাচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা দরে। তবে ভোজ্যতেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিক্রেতারা জানান, খোলা ও মোড়কজাত (প্যাকেট) উভয় ধরনের আটার দামই বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা দোকান থেকে দুই সপ্তাহ আগে মোড়কজাত আটা (দুই কেজি) কেনা যেত ১০৫-১১০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর খোলা আটার কেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে।
এর আগে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আটার দাম এক দফা বেড়েছিল। তখন দুই কেজির মোড়কজাত আটা ৯০-৯৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছিল। খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছিল ৪৫-৪৮ টাকা। মাঝে আটার দামে দুই থেকে তিন টাকা ওঠানামা হয়।
রামপুরা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সুজন মোহাম্মদ বলেন, এখন সবজির দাম নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগ নেই। শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
খিলক্ষেত বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ ফিরোজ বলেন, চার মাস ধরে সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি ছিল। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা ঠিকভাবে সবজি কিনতে পারছিল না অতিরিক্ত দামের কারণে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। সেই হিসেবে আজও সবজির দাম তুলনামূলক কম। দুই একটি সবজি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি এখন ৪০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে, যা আগে ছিল আশি থেকে ১২০ টাকায়। মূলত শীত আসছে তাই সবজির দাম কমে আসতে শুরু করেছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাফি বলেন, আজ বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। সবজির দাম কম হওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে আগের তুলনায়। বর্তমানে বেগুন, টমেটো সহ দুই একটি সবজি ছাড়া বাকিগুলো ৪০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে দাম। শীতের সবজির দাম বাজারে কম থাকে, কিছুদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শীত পড়তে শুরু করবে। আসন্ন শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সবজির বাজারে, তাই সবজির দাম কমে আসতে শুরু করেছে। শীত পড়লে সবজির দাম আরো কমে আসবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুরগি সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কিছুটা কমেছে। মগবাজারের বিক্রেতা ফরিদ বলেন, এ সপ্তাহে দাম কমেছে মুরগির, সাপ্লাই ভালো ছিল।
রামপুরা বাজারে আগত ক্রেতা মোস্তফা জামান বলেন, অন্যান্য মুরগির দাম কমলেও শেষপর্যন্ত ব্রয়লারেই ভরসা রাখতে হয়। বাকি মুরগির দাম কমলেও সেটা তো সামর্থ্যের ভেতর আসেনি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com