weather ৩১.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭০% , শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা, সর্বোচ্চ সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : ১২-০৬-২০২৫ ১৭:৩০

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চলমান আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ায় হোয়াইট হাউজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়াই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় একতরফা হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এবং সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস নিউজ— উভয়ের প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (১১ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের ‘বিপজ্জনক’ অঞ্চলগুলো থেকে মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু আমেরিকানকে ওই অঞ্চল ত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ এটা বিপজ্জনক জায়গা হয়ে উঠতে পারে। দেখা যাক কী হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে জরুরি নয় এমন কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ইরাক ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পেন্টাগনও স্বেচ্ছায় মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিগুলো থেকে সামরিক সদস্যদের প্রত্যাহার অনুমোদন করেছে। কুয়েত ও বাহরাইনের মার্কিন ঘাঁটি থেকেও এমনভাবে কিছু সদস্য সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সিবিএস জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক মহলে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ইসরায়েল ইরানে সামরিক অভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। মার্কিন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল হামলা চালালে ইরান ইরাকের মার্কিন স্থাপনাগুলোতে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। এই শঙ্কার কারণেই এই অঞ্চল থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে। যদিও এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে, তারপরও কার্যকর কোনো সমঝোতা হয়নি। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই এই আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানান, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আগামি সপ্তাহে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ষষ্ঠ দফার বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবারের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি একসময় নিশ্চিত ছিলাম ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে, কিন্তু এখন আর ততটা আত্মবিশ্বাসী নই। তারা সময়ক্ষেপণ করছে বলেই মনে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। তিনি আরো জানান, আলোচনার সুযোগ তৈরি রাখতে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা না চালানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেই ধৈর্য হারাচ্ছেন।

ট্রাম্প আরো বলেন, আমরা কখনোই চাই না ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাক। আমরা এমনটা অনুমোদন করব না। বিষয়টা একেবারে পরিষ্কার।

মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, ইরান সম্ভবত পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে, এবং তারা এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা সেই ইঙ্গিতই দেয়। তবে ইরান বারবার বলে আসছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট কঠোর। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ইরানের ওপর হামলা হয়, তাহলে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা আঘাত হানব। আমাদের কাছে সব মার্কিন ঘাঁটির অবস্থান জানা আছে। আমরা দ্বিধা করব না।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ চাইলে যুদ্ধ হবে না, আলোচনা সফল হবে। কিন্তু যদি সংঘাত শুরু হয়, তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর অধীনস্থ সংস্থা ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সতর্ক করে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার কারণে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে এই প্রভাব বেশি পড়তে পারে।

অ্যাক্সিওস নামের একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম গত মাসেই জানায়, ইসরায়েল ইতোমধ্যে হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং নেতানিয়াহু চায় আলোচনা ব্যর্থ হোক, যাতে ইরানে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আসে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নেতানিয়াহু মনে করছেন, ট্রাম্প আলোচনায় হতাশ হবেন এবং ইসরায়েলকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে ইসরায়েল কি সত্যিই হামলা চালাতে যাচ্ছে, নাকি যুক্তরাষ্ট্র কৌশলে ইরানকে চাপে রাখার জন্য দূতাবাস আংশিক খালি করছে— তা স্পষ্ট নয়। তবে বিষয়টি নিশ্চিত, পরিস্থিতি একটি বিপজ্জনক মোড়ে পৌঁছেছে এবং অল্প একটু উত্তেজনাই পুরো অঞ্চলে বিস্তৃত সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।

উপসংহারে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা আর শুধু অনুমানের বিষয় নয়; বরং এটি এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগগুলোর একটি। এই সংকট কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে ওয়াশিংটন, তেহরান এবং তেলআবিবের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

আইআরজিসি-সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বিজ্ঞানীসহ ইরানে নিহত হয়েছেন যারা আইআরজিসি-সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বিজ্ঞানীসহ ইরানে নিহত হয়েছেন যারা রাজধানীর বাজারে সবজি-মুরগির দাম কম, মাছ চড়া রাজধানীর বাজারে সবজি-মুরগির দাম কম, মাছ চড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শুরু ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শুরু ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু ইরানের ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু ইরানের কয়েক মিনিট দেরি হওয়ায় বিমানটিতে উঠতে পারেননি ভূমি চৌহান কয়েক মিনিট দেরি হওয়ায় বিমানটিতে উঠতে পারেননি ভূমি চৌহান