ইরানে ফের হামলার হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের
প্রকাশ : ২৮-০৬-২০২৫ ১২:৫৬

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান জয় পেয়েছে— এমন দাবি করেছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তার এ দাবির তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলে ইরানে আবার বোমাবর্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওপর রাগ ঝেড়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, তিনি খামেনিকে ‘এক সহিংস ও অপমানজনক’ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। ট্রাম্প আরো লেখেন, আগের দিন এক বক্তব্যে ইরানের ‘বিজয়’ দাবি করার সময় খামেনি ‘নির্লজ্জ ও বোকামিপূর্ণ’ মিথ্যা বলেছেন।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। শনিবার (২৮ জুন) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে ‘অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে নিন্দা জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আরাগচি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি মনেপ্রাণে চুক্তি করতে চান, তাহলে তাকে আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং তার কোটি ভক্তের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।’
আরাগচি আরো বলেন, যে গৌরবান্বিত ও শক্তিশালী ইরানি জনগণ সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বাঁচতে ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের ‘ড্যাডি’র কাছে ছুটতে হয়েছে, তারা (ইরানি জনগণ) হুমকি বা অপমান একটুও সহ্য করেন না।
গত সপ্তাহের শুরুতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে ইরানের ফরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান।
নিজেদের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়ে তেহরান মূলত ওয়াশিংটনের গালে ‘সজোরে চড়’ মেরেছে—১২ দিনের সংঘাত বন্ধের পর দেওয়া প্রথম ভিডিও বার্তায় এমন কথাই বলেন খামেনি। জবাবে শুক্রবার (২৭ জুন) দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প জানান, ‘চূড়ান্ত কিছু করা’ থেকে ইসরায়েলকে সরে আসতে বলেছেন তিনি।
পোস্টে খামেনির উদ্দেশে ট্রাম্প লেখেন, তার দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তার তিনটি ক্ষতিকর পারমাণবিক স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি এটিও জানতাম যে তিনি কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন। আমি ইসরায়েল ও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মার্কিন সামরিক বাহিনীকে দিয়ে তার জীবন শেষ করে দিইনি।
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে কিনা, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এসব হামলার ফলাফল ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে; তার সঙ্গে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির আকাঙ্ক্ষা যদি দমানো না যায়, তাহলে তিনি নতুন করে হামলার কথা বিবেচনা করবেন কিনা? মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্রুত জবাব দেন, অবশ্যই। এটি প্রশ্নাতীত।
ট্রাম্প আরো আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কিংবা অন্য কোনো স্বীকৃত সংস্থার পর্যবেক্ষকদের নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেবে তেহরান।
তবে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কে স্থগিতের বিষয়ে ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় ইরান এমন উদ্যোগ নিয়েছে। শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইঙ্গিত দিয়েছেন, পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের যেকোনো অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে তেহরান।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com