ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু ইরানের
প্রকাশ : ১৩-০৬-২০২৫ ১৫:৪৬

ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। গত কয়েক ঘণ্টায় ইরান ইসরায়েলে ১০০টিরও বেশি ড্রোন ছুঁড়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো ভূপাতিত করার চেষ্টা করছে। শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে এ তথ্য জানায় দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে ইরানি ড্রোনগুলোকে ইসরায়েলের দিকে যাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে।
ফুটেজে স্পষ্টতই ইরাকের উপর দিয়ে একটি ড্রোন উড়তে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল অধিকৃত কোনো ভূমিতে সেটি আঘাত হেনেছে।
পাল্টা আক্রমণে ব্যবহার করা ইরানের ড্রোনগুলোর মধ্যে শক্তিশালী শাহেদ ভেরিয়েন্টও রয়েছে। ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়েছে এমন একটি ড্রোনকে ইরানি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন বলে শনাক্ত করেছে ইসরায়েলিরা। এটিই পূর্ব ইরাকের উপর দিয়ে নিচু হয়ে পশ্চিম দিকে উড়ে যাচ্ছিল। এর মধ্য দিয়ে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয়েছে, বলছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এর আগে আজ ভোররাতে ইরানের বিভিন্ন স্থানে আকাশপথে হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরায়েলের ভূখণ্ডের দিকে প্রায় ১০০টি ড্রোন পাঠিয়েছে ইরান, যেগুলো আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেফরিন জানান, ইরানে ইসরায়েলি হামলায় ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়, যেগুলো দেশটির ভেতরে প্রায় ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
গত রাতের ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান ও ইরানের জরুরি কমান্ডের প্রধান নিহত হয়েছেন বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেফরিন।
ইরানজুড়ে আজ পাঁচটি ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অজ্ঞাতনামা একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকাকে এ কথা জানিয়েছেন।
একই কর্মকর্তা বলেন, ইরানে শত শত হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত আটটি শহরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।
আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত দুটি ধাপে হামলা চালানো হয়। তবে নিশ্চিত না হলেও এখন তৃতীয় দফার হামলা চলমান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেসব স্থানে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেসব হলো রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের সামরিক স্থাপনা; তেহরানের দক্ষিণে নাতাঞ্জ শহর, যেখানে ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অবস্থিত; তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে; তেহরানের দক্ষিণে ইস্পাহান শহর; তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাক শহর ও পশ্চিমে কেরমানশাহ শহর।
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ছয় থেকে নয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী এসব হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের মুখপাত্র আবুলফজল শেখারচি বলেন, ‘জায়নবাদী এই হামলার জবাব অবশ্যই ইরানি সশস্ত্র বাহিনী দেবে।’
মুখপাত্র আরো বলেন, ‘ইসরায়েলকে তার হামলার চড়া মূল্য দিতে হবে এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
এদিকে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘ইসরায়েলের হামলার জবাব হবে কঠোর ও ফলাফল নির্ণায়ক।’
হামলা কি অত্যাসন্ন— জানতে চাইলে একই সূত্র বলেছে, ইরানের প্রতিশোধ কেমন হবে, তার বিস্তারিত নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।
হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ছাড়াও জ্যেষ্ঠ দুই পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিহত দুই বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন, ফারেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি।
ফারেদুন আব্বাসি ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা (এইওআই)-এর সাবেক প্রধান। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর দেখভাল করে থাকে এইওআই। ২০১০ সালে তেহরানের একটি সড়কে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তখন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। নিহত আরেক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতাঞ্জ শহরে অবস্থিত ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তার দেশ। ইরানের যেসব বিজ্ঞানী দেশটির জন্য (পারমাণবিক) বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরো বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন, তত দিন এমন হামলা চলবে।’
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com