জাতিসংঘের অধিবেশনে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে যোগ দিতে বাধা
প্রকাশ : ৩০-০৮-২০২৫ ১৬:৪০

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও তার সঙ্গে থাকা প্রায় ৮০ জন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আগামী মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন না তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। খবর বিবিসির।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অভিযোগ করেছেন, আব্বাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করছেন এবং একতরফাভাবে একটি ‘কাল্পনিক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ স্বীকৃতির চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল।
তবে সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যে কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি সম্পর্ক যাই হোক না কেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বৈঠকে যোগ দেওয়ায় বাধা দেওয়া যাবে না।
এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে আব্বাসের কার্যালয়।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর এর আগে বলেছিলেন, তাদের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে আব্বাস নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বৈঠকে অংশ নেবেন।
কিন্তু পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) এবং প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটির (পিএ) সদস্যদের ভিসা না দেওয়া ও বাতিলের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে আব্বাস এবং আরো প্রায় ৮০ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আব্বাস পিএলও এবং পিএ-র প্রধান। পিএ পশ্চিম তীর শাসন করলেও সেখানে তারা নিয়মিতই ইসরায়েলি সেটলার ও সরকারের নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ছে।
আর পিএলও হচ্ছে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর জোট, যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৭৪ সাল থেকে পিএলও-র জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক মর্যাদা রয়েছে। এর অর্থ তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠকে অংশ নিতে পারলেও ভোট দিতে পারে না।
রুবিও জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ মিশনে থাকা ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সদরদপ্তর চুক্তির অধীনে সেপ্টেম্বরের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন।
এই চুক্তির অধীনেই যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের কার্যক্রম চলে। সেই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে চাওয়া কোনো দেশের কর্মকর্তার ভিসা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করতে পারে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
ওই চুক্তিটি এভাবেই করা হয়েছে, যেন কোনো দেশের সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক ‘যেমনই হোক না কেন’ নিউ ইয়র্কে (জাতিসংঘ সদর দপ্তরে) ওই দেশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেবে না।
আব্বাসের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে ‘আশ্চর্য হয়েছে’।
এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সদরদপ্তর চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, বিশেষ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যখন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত দলানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেছে তারা।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
শুক্রবারের ঘোষণায় রুবিও বলেছেন, পিএলও এবং পিএ-কে শান্তির ক্ষেত্রে অংশীদার বিবেচনা করার আগে, তাদেরকে অবশ্যই (ইসরায়েলে ২০২৩ সালের) ৭ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞসহ সন্ত্রাসবাদকে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে, যেমনটা মার্কিন আইনে আছে এবং পিএলও-ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে গিয়ে আলোচনাকে বাইপাস করার যে প্রচেষ্টা, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের তাও বন্ধ করতে হবে, বলেছেন তিনি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের ভিসা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবে জাতিসংঘ। শিগগিরই এই সংকটের সমাধান হবে বলেও তারা আশাবাদী।
সব সদস্য রাষ্ট্র ও স্থায়ী পর্যবেক্ষকদের উপস্থিত হতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এবার, যখন অধিবেশনের শুরুতে ফ্রান্স ও সৌদি আরব দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করছে, বলেছেন দুজারিক।
ফ্রান্স ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া আগামী মাসে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে বলে দেশগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকি যারা দেয়নি তারা বেশিরভাগই পশ্চিমা দেশ, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com