ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ৪০ বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
প্রকাশ : ০২-০৬-২০২৫ ১২:২২

রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার দৃশ্য, ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রবিবার (১ জুন) ইউক্রেনের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) এই হামলা চালায়। এতে রাশিয়ার ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
ইউক্রেনের এই দাবি সত্য হলে, এটিই হবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রুশ সামরিক ঘাঁটিতে চালানো হামলার মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ড্রোন হামলা; যা মস্কোর জন্য এক বড় ধাক্কা। ইউক্রেন এর আগে এমন হামলা চালালেও তার মাত্রা এত ব্যাপক ছিল না। সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে নতুন দফা শান্তি আলোচনা শুরুর আগে দিয়ে এই ড্রোন হামলা হল।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইউক্রেনের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমানে আঘাত হানা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২। দু’টো যুদ্ধ বিমানই ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে ব্যবহার করে থাকে রাশিয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইউক্রেনের এই দাবি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়ার গণমাধ্যম মুরমানস্ক এবং ইরকুটস্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলার খবর জানিয়েছে। তবে বলেছে, সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তার শেয়ার করা একটি ভিডিও ফুটেজে হামলার দৃশ্য দেখা গেছে। এতে কয়েকটি বড় বোমারু বিমানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এগুলো টিইউ-৯৫ যুদ্ধবিমান বলেই মনে হয়েছে।
রাশিয়ার মতো বিপুল ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভার ইউক্রেনের নেই। তবে এর পরিবর্তে ইউক্রেন গড়ে তুলেছে আক্রমণাত্মক ড্রোনের বহর। রাশিয়ার সামরিক ও তেলক্ষেত্রগুলোতে হামলায় ইউক্রেন এই ড্রোন ব্যবহার করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ‘স্পাইডারস ওয়েব’ নামে বিশেষ এই অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে ১১৭টি ড্রোন। প্রায় দেড় বছর ধরে এর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলেছে। কাঠের তৈরি ভ্রাম্যমাণ কেবিনে লুকিয়ে রাখা ড্রোনগুলো রাশিয়ার ভেতরে বিভিন্ন ঘাঁটির কাছে স্থাপন করে হামলার উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।
এসবিইউ সূত্র বিবিসি নিউজকে বলেছেন, এ হামলার প্রস্তুতিতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। কাঠের ভ্রাম্যমান কেবিনে গোপন ড্রোন রাখা ও সেগুলো বিমানঘাঁটির কাছে নেওয়া এবং এরপর সময়মতো আঘাত হানতে এই সময় লেগেছে। রাশিয়া তার পাঁচটি অঞ্চলে এ হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে একে 'সন্ত্রাসী কার্যক্রম' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ওদিকে, ইউক্রেনে রাতভর সেখানে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেছিলো। ২০১৪ সালে দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলসহ ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে।
রবিবার সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি পোস্টে জেলেনস্কি বলেন তিনি অভিযানে সাফল্যের জন্য এসবিইউ প্রধান ভাসিল মালিউককে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই অভিযানের অফিস ছিলো রাশিয়ার এফএসবির কাছে। এফএসবি হলো রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা সংস্থা। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই অভিযানের সঙ্গে জড়িতরা হামলার আগেই নিরাপদে রাশিয়া ছেড়ে এসেছেন। এসবিইউ ধারণা করছে, হামলায় রাশিয়ার কৌশলগত বিমান পরিবহনের প্রায় সাত বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তারা শিগগিরই বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছে।
তবে ইউক্রেনের দাবির সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। যদিও এসবিইউ'র সূত্র বিবিসিকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে।
যেসব ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে সেগুলো হলো সাইবেরিয়ার ইরকুতস্কের বেলায়া, রাশিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ওলেনিয়া, মধ্য রিয়াজানের ডিয়াজিলেভো ও মধ্য ইভানভো অঞ্চলের ইভানভো ঘাঁটি।
এসবিইউস সূত্র বলছে যেসব যুদ্ধবিমানে হামলা হয়েছে তার মধ্যে পরমাণু সক্ষমতা থাকা টিইউ ৯৫, টিইউ ২২এম৩ ও এ-৫০ বোমারু বিমান আছে। সূত্র বলছে, এসবিইউ প্রথমে এফপিভি ড্রোন রাশিয়া ভেতরে নিয়ে গেছে। এরপর সেগুলো ভ্রাম্যমান কাঠের কেবিনের ছাদের সঙ্গে সেট করা হয়েছে। পরে কার্গোতে স্থাপন করা হয়েছে।
রিমোটের সাহায্যে ছাদ খুলে 'যথাসময়ে' ড্রোনগুলো হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার বোমারু বিমানগুলোর ওপর। ইরকুতস্ক গভর্নর ইগর কবজেভ বেলায়া ঘাঁটিতে হামলার কথা নিশ্চিত করে বলেছে একটি ট্রাক থেকে হামলা চালানো হয়েছে। এলাকাটি নিরাপদ করা হয়েছে এবং জীবনের প্রতি আর কোনো হুমকি নেই বলে তিনি পরে টেলিগ্রামে জানিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোও ট্রাক থেকে বের হওয়া ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করেছে। তারা মুরমানস্কেও হামলার খবর দিয়েছে। তবে বলেছে সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করেছে। ইরকুতস্কে হামলার খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে পাঁচটি অঞ্চলে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। তারা দাবি করেছে ইভানভো, রিয়াজান ও আমুর অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। তবে এসবিইউ আমুর ঘাঁটির কথা বলেনি। মুরমানস্ক ও ইরকুতস্কে বেশ কয়েকটি বিমানে আগুন ধরেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে অগ্নি নির্বাপণ করা হয়েছে ও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ওদিকে ইউক্রেনে ৪৭২টি ড্রোন হামলার পাশাপাশি সাতটি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের স্থল বাহিনী বলেছে তাদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মিসাইল হামলায় ১২ জন সেনা মারা গেছেন। এ ঘটনার পর পদত্যাগ করেছে ওই বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মিখাইলো ডিরাপাতাই।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com