ঢাকার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ভোগান্তি
প্রকাশ : ২৮-০৫-২০২৫ ১১:৩৫

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাবাসীর ভোগান্তি যেন থামছেই না। বছরের পর বছর ধরে রাজধানী ঢাকার নানা সড়কে চলে খোঁড়াখুঁড়ি, সড়ক সংস্কার এবং ড্রেনেজ উন্নয়নের কাজ। বিশেষ করে বর্ষাকাল এলেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি বাড়ে। এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের অগোছালো ও ধীরগতির বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছেন শহরবাসী। খোঁড়াখুঁড়ি ও রাস্তার পাশে সরঞ্জাম ফেলে রাখার কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘ সময় ধরে সংকুচিত থাকে, ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং যানজটের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি সময়েও বহু জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার এসব উন্নয়ন প্রকল্প ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হওয়ায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটের শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
এর মধ্যে শ্যামলী থেকে গাবতলীগামী প্রধান সড়কটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই রাস্তায় চলছে বাংলাদেশ সরকারের ডিপিডিসির সঙ্গে চীনের যৌথ প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ।
এছাড়া ঢাকা ওয়াসা মগবাজার, বাসাবো নন্দীপাড়া সড়ক, মেরুল বাড্ডা, নীলক্ষেতসহ বেশ কিছু জায়গায় ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ করছে। সড়কগুলোর অর্ধেকের বেশি জায়গা বন্ধ করে খোঁড়াখুঁড়ি করায় যান চলাচল হয়ে গেছে এক লেনে।
শ্যামলীর দিকে খনন কাজের ফলে রাস্তার একাংশ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই ওই রুটে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। শ্যামলী থেকে কল্যাণপুরমুখী রাস্তার একাধিক স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলার কারণে রাস্তার পাশে পাইপ, ক্যাবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়েছে।
এমনকি অনেক জায়গায় ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় কাটা রাস্তা মেরামত করা হলেও অধিকাংশ স্থানে এখনো রাস্তা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে সংকুচিত সড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে গিয়ে যানজট হচ্ছে ঘনঘন।
ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের গাড়িতে ওঠার জন্য সড়কের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি যাত্রী ওঠা-নামার সময় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী হয়ে উত্তরা রুটে চলা আলিফ পরিবহনের হেলপার মো. প্রিন্স জানান, শ্যামলী থেকে ইউটার্ন নিতে এখন যেখানে আগে লাগতো পাঁচ মিনিট, সেখানে সময় লাগছে আধাঘণ্টা। এই যানজটের কারণে প্রতিদিনের ট্রিপের সংখ্যা কমে গেছে।
একইভাবে সাভার পরিবহনের হেলপার শামীম বলেন, শ্যামলী থেকে গাবতলী যেতে ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। যানজটের ফলে রোজগার কমে গেছে। যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ।
শ্যামলী থেকে সাভারগামী এক যাত্রী এরশাদ বলেন, গাড়িতে উঠতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। ফুটপাতে তো জায়গাই নেই- সবখানে পাইপ আর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
চীন সরকারের সহযোগিতায় এবং ডিপিডিসির তত্ত্বাবধানে চলমান এই জি-টু-জি প্রকল্পের মূল দায়িত্বে রয়েছে চীনা কোম্পানি টিবিইএ। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিসের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বীন আমিন জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির সময়সীমা মূলত ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। তবে বিভিন্ন জটিলতা ও বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতার কারণে প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় খোঁড়াখুঁড়ির অনুমোদন দিতে দেরি করছে, যার কারণে কাজের গতি ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এটি একটি আন্তঃসংযুক্ত ব্যবস্থা; যা ঢাকার ৫৫টি সাবস্টেশনকে সংযুক্ত করবে।
ফলে ভবিষ্যতে কোনো সাবস্টেশনে সমস্যা হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাবাসী আগামী ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা পাবে। তাই এই মুহূর্তের কিছু ভোগান্তি আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। যেকোনো বড় কিছু করতে গেলে কিছুটা কষ্ট হয়ই।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানিয়েছে, চলতি মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শ্যামলী এলাকার কাজ সম্পন্ন করে সড়ক খনন বন্ধ করা হবে।
তবে প্রকল্পটির মাধ্যমে রাজধানীর সব তার কি মাটির নিচে যাবে কিনা- এই প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প কর্মকর্তা দ্বীন আমিন জানান, উপর দিয়ে যেসব তার দেখা যায় সেগুলো ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, সেগুলো থাকবে। আর আমরা যে কাজ করছি সেটা হলো হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com