জুলাই-আগস্ট আন্দোলন
তিন হাসপাতালে ১৮৫ আহত, চিকিৎসা প্রয়োজন মাত্র ১৭ জনের
প্রকাশ : ০৪-০৬-২০২৫ ১২:৪২

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো ১৮৫ জন ঢাকার তিনটি সরকারি হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে কেবল ১৭ জনের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাকি আহতদের একাধিকবার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তারা চিকিৎসা শেষ না করেই হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতাল— এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে নিটোরে ৭৪ জন, চক্ষুবিজ্ঞানে ৫৫ জন এবং বিএমইউতে ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন।
কয়েক মাস ধরে আহতদের অনেকে নিয়ম-শৃঙ্খলা না মেনে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে অবস্থানকারী কিছু আহত ব্যক্তি কর্তৃক হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গত ২৮ মে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়— যখন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। ওইদিন হাসপাতালে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে পঙ্গু হাসপাতাল থেকেও কয়েকজন আহত গিয়ে যুক্ত হন। এই ঘটনায় চিকিৎসকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই ঘটনার পর থেকে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ বুধবার জরুরি বিভাগ এক সপ্তাহ পর সীমিত আকারে চালু হয়। এ ছাড়া আর কোনো সেবা মিলছে না। এমনটি চলছ সাতদিন ধরে। প্রতিদিন শত শত সাধারণ রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে থাকা ৫৫ জনের মধ্যে মাত্র আটজনের হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। বাকিদের ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তারা হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন না; যার ফলে অন্য সাধারণ রোগীরা বিঘ্নিত হচ্ছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, এখানে থাকা আহতদের কারো এখন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা দু-এক মাস পরপর ফলোআপে এলেই যথেষ্ট। তবে কয়েকজনের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে, যাদের বিদেশে পাঠানো জরুরি।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) কেবিন ব্লকের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থান করা ৫৬ জনের মধ্যে নয় জনের হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। বাকি কেবিনগুলোতে অন্য রোগীদের ভর্তি করতে বাধা দিচ্ছেন কিছু আহত ব্যক্তি; যা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ বলেন, আহতদের মনোভাব ভিন্ন ভিন্ন। কেউ কেউ হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন— রাতে বাইরে থাকা, কেবিনে উচ্চ শব্দে গান বাজানো এবং অন্যান্য রোগীদের বিরক্ত করার মতো কাজ করছেন। আমরা বিষয়টি মানবিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর মঙ্গলবার চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন এবং আহতদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হজ ও ঈদের মৌসুম শেষে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫৭ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন ফিরে এসেছেন। ঈদের পর আরও ২০ জনকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com