weather ৩০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৬২% , শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি

প্রকাশ : ০৩-০৬-২০২৫ ১৬:৩১

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দিকে গাদাগাদি করে রাখতে হচ্ছে, ফলে সৃষ্টি হয়েছে মানবেতর পরিস্থিতি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, বিচার বিলম্ব এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

কারা অধিদপ্তরের ১ জুনের (২০২৫) হালনাগাদ তথ্যমতে, দেশে ৭১টি কারাগারের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারেরও কিছু কম। কিন্তু বর্তমানে বন্দি রয়েছেন প্রায় ৭৩ হাজার জন— যার মধ্যে পুরুষ বন্দি প্রায় ৭১ হাজার ১৮০ জন এবং নারী বন্দি দুই হাজার ৫০০ জনের বেশি। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দিকে রাখা হচ্ছে সীমিত পরিসরে।

এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, বিচারাধীন বন্দি বা হাজতির সংখ্যা ৫৩ হাজার ৯০১ জন; যা মোট বন্দির প্রায় ৭৫ শতাংশ। এসব বন্দিদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার শেষ হয়নি, কিন্তু জামিন না পেয়ে বা মামলা দীর্ঘ হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে তারা কারাগারে অবস্থান করছেন।

বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ঢাকা বিভাগে। ১৮টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৩১২ জন; অথচ বন্দি রয়েছেন ২৫ হাজার ৩৭৩ জন। তা মোট বন্দির প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং ধারণক্ষমতার এক দশমিক ৯২ গুণ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ছয় হাজার ৯৫০ জন; বন্দি রয়েছেন ১৪ হাজার ৫০৯ জন— দ্বিগুণের বেশি।

রংপুর বিভাগ তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। সেখানে আটটি কারাগারে ধারণক্ষমতা পাঁচ হাজার ১৭৯ জন, বন্দি চার হাজার ৯০৮ জন।

বাকি বিভাগগুলোতেও একই অবস্থা— রাজশাহীতে একজনের জায়গায় আছেন দুই দশমিক ২৫ জন। ময়মনসিংহে দুই দশমিক ২১ জন, বরিশালে এক দশমিক ৪৭ জন, খুলনায় এক দশমিক ২৯ জন এবং সিলেটে সংখ্যাগতভাবে প্রায় ধারণক্ষমতার কাছাকাছি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন বন্দির জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার, আমাদের এখানে তিন গুণ বেশি মানুষ গাদাগাদি করে থাকছে। কারারক্ষীর সংকটের কারণে শৃঙ্খলা রক্ষা করতেও হিমশিম খেতে হয়।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে, যেখানে ধারণক্ষমতা এক হাজার জন; সেখানে রাখা হচ্ছে আড়াই হাজার জনের মতো। জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, একেকটি সেলে থাকার কথা একজনের, কিন্তু রাখতে হচ্ছে দুই-তিনজন করে। মহিলা কারাগারের অবস্থাও ভয়াবহ— ধারণক্ষমতা ২০০ জন, কিন্তু বন্দি ৬২১ জন।

বন্দিদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। ৭১টি কারাগারের জন্য রয়েছেন মাত্র ছয়জন চিকিৎসক। এ ছাড়া কারারক্ষী ও ব্যবস্থাপনা জনবলের সংকট রয়েছে। কারাবন্দিদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, কারাগার সংশোধনের জায়গা হলেও বাস্তবে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বন্দিরা শৌচাগার ব্যবহারে লাইন দিতে বাধ্য হচ্ছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন না, সুষ্ঠুভাবে ঘুমানোর সুযোগ পর্যন্ত নেই।

তিনি আরো বলেন, বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা কমাতে অতিরিক্ত আদালত, বিচারক নিয়োগ এবং দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

কারা অধিদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, নরসিংদী ও জামালপুরে নতুন পাঁচটি কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো চালু হলে ধারণক্ষমতা বাড়বে।

কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দ্রুত জামিনপ্রাপ্তদের মুক্তি দেওয়া, সাজাপ্রাপ্তদের আলাদা রাখা এবং বন্দিদের জন্য প্রশিক্ষণভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই আমাদের লক্ষ্য। সাভারে একটি কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে বন্দিরা কাজ করে আয় করতে পারবেন। তিনি আরো জানান, এক হাজার ৮৯৯ জন জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায় কোলাহলময় ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা কোলাহলময় ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত গাজায় যুদ্ধবিরতি: নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবে ভেটো দিল যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতি: নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবে ভেটো দিল যুক্তরাষ্ট্র