weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভর্তুকি ও প্রণোদনার লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব আদায়ে বাড়তি চাপ তৈরি করবে

প্রকাশ : ১৪-০৬-২০২৫ ১২:০৫

ছবি : সংগৃহীত

পিপলসনিউজ ডেস্ক
সংকটময় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকারের নির্ধারিত এক লাখ ২৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনার লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব আহরণের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এই বরাদ্দ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় নয় শতাংশ বেশি হলেও তা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ শতাংশ কম, যেখানে সংশোধিত ভর্তুকির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে ভর্তুকির জন্য এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে সেই বছর অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকটি খাতে বকেয়া পরিশোধে বিশেষ অনুমোদন দেওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালায় সরকার বলেছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশিত না হওয়ায় ভর্তুকি ও প্রণোদনার খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

নতুন অর্থবছরের ভর্তুকি বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হবে বিদ্যুৎ, সার ও খাদ্য খাতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১২০ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান মনে করেন, ভর্তুকি ও প্রণোদনার এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখা সম্ভব নয়। তার মতে, এগুলো ধাপে ধাপে হ্রাস করতে হবে এবং এজন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিগত দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পে টানা প্রণোদনা প্রদান দেশীয় শিল্প রক্ষার কার্যকর কৌশল নয়। বরং, প্রতিযোগিতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পকে টেকসই করে তুলতে হবে। এ ছাড়া, ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় কমাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রস্তাবিত ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়, যার একটি বড় অংশ দিয়ে পূর্বের বছরের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র নয় হাজার কোটি টাকা, কিন্তু পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ না করে নতুন বড় প্রকল্প অনুমোদনের কারণে ভর্তুকি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।

বিশ্ববাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি ও এলএনজির দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে এবং এর ফলে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়াতে হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার সময়মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় তা জমতে থাকে, যা এখন পরিশোধ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদিও অধিকাংশ বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে, তবু আগামী অর্থবছরে কিছু অংশ বাকি থাকতে পারে, যা ধাপে ধাপে পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, অন্তর্বর্তী সরকার পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়ন থেকে বিরত রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ভর্তুকির বোঝা কমাতে সহায়ক হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই।

এলএনজি আমদানিতেও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেড়ে নয় হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট এলএনজি কেনা ও বিক্রির মধ্যে পার্থক্য ১৭ হাজার ৬৭৬ টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং তা কম দামে দিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোর শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করছে সরকার। একই সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নেপালের সঙ্গে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।

দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

বিদ্যুৎ খাতের পরে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দ পাবে কৃষি খাত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে সার ও আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে জোর দিচ্ছে।

কম আয়ের পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা বাড়াতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খাদ্য ভর্তুকি ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘ওপেন মার্কেট সেলস (ওএমএস)’ ও ‘টিসিবি’র মাধ্যমে পরিচালিত খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ লাখ থেকে ৫৩ লাখ করা হবে। এই প্রকল্পে প্রতিটি পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ১৫ টাকা কেজি দরে ছয় মাসের জন্য দেওয়া হবে, যেখানে বর্তমানে তা দেওয়া হয় পাঁচ মাস।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে যথাক্রমে সাত হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রণোদনা বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রণোদনা বাবদ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৪২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা এবং নগদ ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

অধ্যাপক লুৎফর রহমান মনে করেন, রেমিট্যান্সের ওপর নগদ প্রণোদনা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়, বিশেষত বর্তমানে বিনিময় হার প্রায় বাজারভিত্তিক হওয়ায় এ ধরনের প্রণোদনা বাতিল করা উচিত।

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধীরে ধীরে রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস করার নীতি গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর, টেকসই এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির পথে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

রাতে পাঁচবার জায়গা বদল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের রাতে পাঁচবার জায়গা বদল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাজারে বাহারি মৌসুমি ফল, দাম চড়াই বাজারে বাহারি মৌসুমি ফল, দাম চড়াই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪ ইসরায়েলি নিহত, আহত ৬৩ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪ ইসরায়েলি নিহত, আহত ৬৩ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়‌কে দীর্ঘ এলাকায় থেমে থেমে যানজট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়‌কে দীর্ঘ এলাকায় থেমে থেমে যানজট পুলিশের কাছে রাইফেল থাকবে, মারণাস্ত্র থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশের কাছে রাইফেল থাকবে, মারণাস্ত্র থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা