কুমিল্লায় নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিওধারণ
হাসপাতালে ফজর, বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে
প্রকাশ : ২৯-০৬-২০২৫ ১৬:৫৫

ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৮ জুন) রাতব্যাপী অভিযান চালিয়ে চারজনকে এবং রবিবার (২৯ জুন) ভোরে রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফজর আলীকে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি চারজনকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাশেদুল হক চৌধুরী।
এএসপি রাশেদুল বলেন, স্থানীয়দের হাতে আটকের পর বেদম প্রহারের শিকারের হন মূল অভিযুক্ত ফজর আলী। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে যান ফজর। আহতাবস্থায়ই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন ফজর। রবিবার ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের সময়ও বেশ আহত ছিলেন ফজর; উল্লেখ করে এএসপি বলেন, তাকে কুমিল্লায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ধর্ষিতা নারীকে উদ্ধার করতে আসা লোকজন কেন ভুক্তভোগী নারীকে মারধর, গালিগালাজ করলেন কিংবা নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করলেন, এসব বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এএসপি রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। এখনো তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে পুরো বিষয়গুলো নিয়েই আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে বিস্তারিত জানাতে পারব।
উল্লেখ্য, বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই নারী (২৫)। তাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফজর আলী নামে (৩৮) এক যুবকের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকালে এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। তিনি দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী দুবাই প্রবাসী। অভিযুক্ত ফজর আলী বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামের পূর্বপাড়ার শহীদ মিয়ার ছেলে।
মামলায় বলা হয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই নারী বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর ওই নারীর বাবা-মা বাড়ির বাইরে যান। তখন ফজর আলী বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে স্থানীয়রা এসে ফজর আলীকে ধরে মারধর করে এবং কেউ কেউ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।
ওই নারী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি আমার বাবার বাড়ি এসে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় আমি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানাই। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাকে ধর্ষণ করেন।
ওই নারীর পাশের বাড়ির এক সদস্য বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, টাকা ধার নেওয়ার সূত্রে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের পরিচয় ছিল। স্থানীয় লোকজন ধর্ষক ওই ব্যক্তিকে বিএনপি কর্মী বলে দাবি করলেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাকে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের কর্মী বলে প্রচার চালাচ্ছেন। এরই মাঝে আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশগ্রহণের ধর্ষকের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে ওই নারীকে নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার রাত থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় বিবস্ত্র অবস্থায় ১০-১২ জন যুবক ওই নারীকে মারধর করছে। এ সময় ওই নারী বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও কেউ তাকে রক্ষা করেনি।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ফজর আলীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। বাদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও শেষ। অভিযুক্ত ফজর আলীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com