weather ২৯.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৯% , বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার পশু কোরবানি কমেছে, অবিক্রীত আছে ৩৩ লাখ

প্রকাশ : ১১-০৬-২০২৫ ১১:৪০

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহায় এ বছর দেশে ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছে; যা গত বছরের চেয়ে নয় লাখ কম। গত বছর ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট এক কোটি চার লাখ আট হাজার ৯১৮টি গবাদি পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার ৩৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল। তবে কোরবানির মধ্যে গরু ও ছাগলের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এবার দেশে মোট ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে; যার মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৭ লাখ পাঁচ হাজার ১০৬টি, ছাগল বা ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি এবং অন্যান্য প্রাণি ৯৬০টি।

দেশে পশু কোরবানির হিসাব মূলত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর করে থাকে। অধিদপ্তর স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করেছে। প্রতিটি উপজেলার তিনটি গ্রাম (ছোট, মাঝারি ও বড়) থেকে অন্তত এক শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করে হিসাবটি করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি। কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল, তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া অবিক্রীত এই পশু সামনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে দরকার পড়বে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে, তিন লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি। এরপর কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে, তিন লাখ ৮৩ হাজার ১৬২টি। আর সর্বোচ্চ ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ঢাকা বিভাগে কোরবানি হয়েছে ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি। 

অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনায় আট লাখ চার হাজার ২২৪টি, বরিশালে চার লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে নয় লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছিল ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।

২০২৩ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল এক কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়, অর্থাৎ ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত ছিল। আর ২০২২ সালে সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল।

মানিকগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। সে তুলনায় বড় গরুর ক্রেতা ছিল খুব কম। 

খামারিরা বলছেন, যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় এসে তাদের বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে গোখাদ্যের দাম চড়া।

দেশের বড় এগ্রো ফার্মের একটি ‘বগুড়া ভান্ডার’। বগুড়া থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে গরু পাঠিয়ে থাকে খামারটি। কোরবানি ঘিরে বড় গরু বিক্রির টার্গেট থাকলেও এবার তারা পরিস্থিতি বুঝে আগেই ব্যবসা কিছুটা সংকুচিত করে আনে।

খামারটির স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানান, ‌গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর খামার থেকে বড় গরু কেনার প্রবণতা কমতে শুরু করে। এবারের কোরবানিতে বড় গরু কম বিক্রির বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই এ বছর তুলনামূলক মাঝারি থেকে ছোট গরুই বিক্রি করেছেন। তার খামারের সর্বোচ্চ বড় গরু বিক্রি হয়েছে ৭৫০ কেজি ওজনের।

তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, গত বছর আমার ফার্ম থেকে এক হাজার ২৫০ কেজি ওজনের গরু বিক্রি হয়েছিল। এবার বড় গরু রাখিনি। মাঝারি ও ছোট গরু বিক্রি করেছি ৭০টি। যারা নতুন করে বড় গরু তুলেছে এবং কোরবানিতে বিক্রির টার্গেট নিয়েছে, তারা বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।

শুধু বগুড়া ভান্ডারই নয়, দেশের অন্য খামারেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বড় গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এবার কোরবানির বাজারে বেশি চাহিদা ছিল ছোট ও মাঝারি গরুর। রাজধানীর হাটগুলোতে দেখা গেছে, ঈদের এক দিন আগেই হাটের ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পরে আবার ছোট গরু বিভিন্ন স্থান থেকে এনে হাটে তোলা হয়।

খামারিরা দাবি করছেন, সাধারণত বিত্তবানরাই বড় গরুর ক্রেতা। গত বছরের ছাগলকাণ্ড ও ব্রাহমা জাতের গরুর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসার পর বড় গরুর ক্রেতা কমে গেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। এ কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। 

নড়াইলের চিত্রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মিল্টন হোসেন বলেন, এবার ৪৫টি গরু বিক্রি করেছি। এর মধ্যে এক হাজার ৪০০ কেজি ওজনের গরুও আছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অন্যদিক থেকে। অন্য বছর ঈদের এক মাস কিংবা ১৫ দিন আগেই বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেত। এবার ঈদের আগের দিনও আমি গরু বিক্রি করেছি। 

তিনি বলেন, লাভ একেবারেই সীমিত ছিল। ঈদের আগে পরিবহন খরচ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। কোরবানির বাজার এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, আমাদের ব্যবসার ধরনই পাল্টাতে হবে। তা ছাড়া ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় খামারিরা দিন দিন বড় গরুতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

অনেক খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বড় গরু এবার অবিক্রীত রয়ে গেছে। তা ছাড়া গরুর দামও ছিল কম। অথচ এসব গরুর পেছনে খরচ হয় অনেক বেশি। সে কারণে খামারিদের বড় অংশই এখন ছোট ও মাঝারি গরু লালন-পালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বড় গরু অবিক্রীত থাকার বিষয়টি সামগ্রিক কোরবানির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে না বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘অন্যবারের মতো এবারো মানুষ কোরবানি করেছেন। হয়তো ছোট গরু কিংবা ভাগে তারা কোরবানি দিয়েছেন। 

বড় গরু কোরবানিদাতা সবসময় সীমিত সংখ্যক হয়ে থাকে। এবার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে সে সংখ্যাটি হয়তো কমেছে; কিন্তু এটি বড় বিষয় নয়। এটি সাময়িক। আগামী বছর এমন পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

ইরানে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা, সর্বোচ্চ সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা, সর্বোচ্চ সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট, তীব্র গরম থাকবে আজও দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট, তীব্র গরম থাকবে আজও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তার ছেলে জয় ভারতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তার ছেলে জয় ভারতে অবশেষে খুলেছে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের বহির্বিভাগ অবশেষে খুলেছে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের বহির্বিভাগ তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা