কিরগিজস্তান থেকে দেশে ফিরেছেন ১৮০ বাংলাদেশি
প্রকাশ : ১০-০৯-২০২৫ ১৬:০৫

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
গার্মেন্টস ও নির্মাণ খাতে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে কিরগিজস্তানে যাওয়ার পরে সেখানে কাজ না পাওয়া এবং প্রতারণার শিকার হওয়া ১৮০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিশেষ এক ফ্লাইটে দেশটির রাজধানী বিশকেক থেকে দেশে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় এক বিশেষ ফ্লাইটে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বিদেশ থেকে ফেরত আসা এসব মানুষকে বিমানবন্দরে অর্থ ও জরুরি সহায়তা দেয়।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘বিদেশে বেশি বেতনের কাজের লোভ দেখিয়ে এসব মানুষকে কিরগিজস্তানে নেওয়া হয়েছিল। অথচ সেখানে গিয়ে অনেকে কাজ পাননি, বেতন পাননি, ফলে নথিপত্রহীন হয়ে পড়েন। অনেকে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। অনেকের পরিবার মুক্তিপণ দিতেও বাধ্য হয়েছে।’
ফেরত আসা একজন লালমনিরহাটের আদিতমারীর মো. শহীদুল ইসলাম (৪৫)। তিনি বলেন, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে বেশি বেতন পাবেন এই আশায় ২০২৪ সালের ৩ জুন বিশকেকে পৌঁছানোর পরদিনই ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এরপর সেখানে নানা কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করেছি। বেতন ছাড়া কাজ করেছি সাত মাস। পরে কিরগিজ কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা দিই। তিন মাস জেল খেটে মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরেছি বিশেষ বিমানে।
ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে শরীয়তপুরের সখীপুরের প্রিন্স মিয়াকে (২১) দুবাই নিয়ে গিয়েছিল দালাল। সেখান থেকে এ বছরের ১৯ মে তাকে বিশকেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কিছুদিন কাজ করার পরে তাকে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। দালালকে এ কাজের জন্য চার লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মধ্য এশিয়ার জেলে ৪৪ দিন আটক ছিলেন তিনি।
নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের মো. মিলন আলীও (৩৮)। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলেও তিনি কোনো সহায়তা পাননি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে। টানা চার মাস বেতন না পাওয়ায় তিনি নিজেই সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছেন। তিন মাসেরও বেশি সময় অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে সেখানকার কারাগারে ছিলেন তিনি। তীব্র রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার মতো নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে তাকে ও তার সাথিদের, দাবি করেন তিনি।
ব্র্যাক জানিয়েছে, বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তা দিতে আট বছর ধরে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিল অ্যাভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএনসহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত আল-আমিন নয়ন, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা রায়হান কবিরসহ একটি দল মানবিক এই কাজে যুক্ত আছেন। বিদেশে বিপদে পড়া যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্র্যাক তাদের সহায়তা ও পুনরেকত্রীকরণের কাজ করবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com