ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনায় চাঞ্চল্য, নিন্দা
প্রকাশ : ০৫-০২-২০২৫ ২৩:৫০

ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসিত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ভূখণ্ডের দখল নিয়ে সেটিকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করবে।
তার এই ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে; নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্ব নেতা এ কর্মপরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এ ঘোষণায় ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলা সংঘাত নিয়ে কয়েক দশক ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘোষণায় টানা ১৫ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন করছেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সৌদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না দেশটি। হামাস ও পিএলও এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের নেতৃস্থানীয়রা এ ঘোষণায় নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে করা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার এই আশ্চর্য পরিকল্পনা তুলে ধরেন; তবে এর সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা প্রস্তাব করেননি তিনি।
এর আগে একইদিন সকালে ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়ে সবাইকে স্তম্ভিত করে দেন।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ভঙ্গুর একটি যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব পালিত হচ্ছে। এই ছিটমহলকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এলাকা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্প আশা করতে পারেন মিত্র এবং শত্রুরা একইরকমভাবে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো দখলদারিত্বের প্রবল বিরোধিতা করবে।
ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নিলে তা ওয়াশিংটন ও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ দীর্ঘদিন ধরে যে নীতি অনুসরণ করে আসছে তার বিপরীত হবে। ওই নীতিতে গাজাকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ বলে ধরা হয়, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরও যার অন্তর্ভুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ভূখণ্ডের দখল নেবে আর আমরা এটিকে নিয়ে একটি কাজও করবো। আমরা এটির মালিক হয়ে সেখানে থাকা বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত সব বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র ধ্বংস করার দায়িত্বপালন করবো। যদি এটি প্রয়োজনীয় হয়, আমরা তা করবো, আমরা খণ্ডটি দখল করতে যাচ্ছি, আমরা সেটির উন্নয়ন ঘটাতে যাচ্ছি, হাজার হাজার চাকরি তৈরি হবে আর এটি এমন কিছু হবে যার জন্য পুরো মধ্যপ্রাচ্য অত্যন্ত গর্বিত হতে পারে। আমি একটি দীর্ঘমেয়াদি মালিকানার অবস্থান দেখতে পাচ্ছি আর এটি মধ্যপ্রাচ্যের ওই অংশে ব্যাপক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।
তিনি জানান, তিনি এ ধারণা নিয়ে ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আর তারা এতে সমর্থন জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দখলকৃত গাজায় কারা বসবাস করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি বিশ্বের মানুষের বাড়িতে পরিণত হতে পারে।
ফিলিস্তিনের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এই সংকির্ণ ভূখণ্ডটির মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা হয়ে উঠার সম্ভাবনা আছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
কীভাবে এবং কোন কর্তৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির আবাস গাজা দখল করে এটি অধিকার করতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি তিনি।
সাগর তীরবর্তী এই ভূণ্ডটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘ সহিংসতার ইতিহাস আছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনগুলো ধারাবাহিকভাবে এই বিপজ্জনক ভূখণ্ডে মার্কিন সেনা মোতায়েন এড়িয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প কয়েকবার নেতানিয়াহুকে তার ডাক নাম ‘বিবি’ উল্লেখ করে কথা বলেন। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় নিজেকে জড়াননি। শুধু একটি নতুন পন্থায় চেষ্টা করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন।
ইসরায়েলি নেতা বলেন, ট্রাম্প নতুন ধারণা নিয়ে পুরোপুরি অন্যভাবে চিন্তা করছেন। তিনি প্রচলিত চিন্তাভাবনাকে থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা প্রদর্শন করছেন।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প ভবিষ্যৎ আলোচনার মাত্রা ঠিক করতে কখনো কখনো বৈশ্বিক বিষয়ে একটি চরম অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রথম মেয়াদেও তিনি এমন কিছু চরম বৈদেশিক নীতির কথা উচ্চারণ করেছিলেন যার অনেকগুলোই কখনোই বাস্তবায়ন করেননি।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নয়: সৌদি আরব
গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অধিকারের বিষয়ে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না সৌদি আরব।
ট্রাম্পের এক মন্তব্যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের কোনো দাবি নেই বলে ইঙ্গিত দেওয়া হলে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) যুবরাজের বক্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ জানায় রিয়াদ।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে যুবরাজের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান পরিষ্কার ও স্পষ্ট, যা কোনো অবস্থাতেই ভিন্ন ব্যাখ্যার সুযোগ দেয় না।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের যেকোনো প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান আপসহীন এবং এ নিয়ে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা ভূখণ্ডের দখল চায়- মঙ্গলবার এমন বলার সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্র চাইছে না। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিক্রিয়া এলো।
ট্রাম্পের গাজা দখরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখণ্ড থেকে সরানোর যে কোনো চেষ্টার বিরোধিতা করবে সৌদি আরব।
ফিলিস্তিনিদের নিয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা বা দরকষাকষির কোনো সুযোগ নেই, বলেছে তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের অবস্থান এত সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিয়েছেন, কোনো পরিস্থিতিতেই এর অন্য কোনো ব্যাখ্যার কোনো সুযোগ নেই।
ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা কেবল ফিলিস্তিনিদের জন্যই নয়, আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্যও বেশ সংবেদনশীল, বলছে রয়টার্স।
গত মাসে হওয়া যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সোয়া এক বছরের যুদ্ধের সময়ও ফিলিস্তিনিরা আরেকটি ‘নাকবা’ বা জোর করে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন। ইসরায়েলের জন্মের সময়ের ‘নাকবা’ লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে সৌদি আরবের অবস্থান ট্রাম্পের পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই রিয়াদের সঙ্গে তেল আবিবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব যেন ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সেটাও তাদের চাওয়া।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের নির্মম তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়ায় পুরো আরব অঞ্চল ফুঁসে উঠলে সৌদি আরব তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা তাকে তুলে রাখে।
ট্রাম্প চাইবেন, সৌদি আরব যেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। এই দুই দেশ ২০২০ সালে কথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডে’ স্বাক্ষর করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দিয়েছিল।
সৌদি আরবকে এ তালিকায় নিতে পারা হবে ইসরায়েলের জন্য বিরাট পুরস্কার; কেননা কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বেই রিয়াদের প্রভাব অনেক অনেক বেশি। সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারকও।
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের শত্রুতাপূর্ণ মন্তব্যের সমালোচনা হামাসের
ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিনি সংগঠনটি ট্রাম্পের প্রস্তাবকে শত্রুতাপূর্ণ অভিহিত করে বলেছে, ট্রাম্পের এ মনোভাব মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি একটি হুমকি।
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনের জনগণ ও তাদের প্রতিরোধের দলগুলো কোনো বিদেশি শক্তিকে তাদের ভূমি দখল করতে বা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেবে না।
হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য নিয়ে আলোচনার জন্য আরব লীগ, অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও জাতিসংঘকে জরুরি বৈঠক ডাকার এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সংগঠনটি ওয়াশিংটনকে আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পরিপন্থি দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, এমন প্রশ্নে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, আমরা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা সফল করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
হামাসের পাশাপাশি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। পিএলও-র মহাসচিব হুসেইন শেখ বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজভূমি থেকে উৎখাতের সব ধরনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে পিএলও।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ পিএলও এর এই কর্মকর্তা বলেন, ফিলিস্তিনের নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক আইন ও বৈধতা অনুযায়ী দ্বিরাষ্ট্রীক সমাধানকে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির নিশ্চয়তা বলে মনে করে এবং এ বিষয়ে তাদের দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে পিএলও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সংগঠন।
বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। টানা ১৫ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন করছেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস মারফি: ট্রাম্পের গাজার মালিকানা নেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর মারফি বলেছেন, তিনি (ট্রাম্প) একেবারে গেছেন। গাজার মার্কিন আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মার্কিন সেনার মৃত্যু ঘটাবে এবং কয়েক দশক যুদ্ধের দিকে তা পরিচালিত হবে। এটি খারাপ, অসুস্থ রসিকতার মতো।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন: ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর হোলেন বলেছেন, ট্রাম্পের গাজা থেকে ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বের করে দেওয়ার এবং প্রয়োজনে জোর করে মালিকানা নেওয়ার প্রস্তাবটি কেবল অন্য নামে জাতিগত নিধন। এই ঘোষণা ওই অঞ্চলে আমাদের আরব অংশীদারদের অবজ্ঞা করার পাশাপাশি ইরান ও অন্যান্য বিরোধীদের বারুদ জোগাবে।
ভ্যান হোলেন বলেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য কয়েক দশকের দ্বিপক্ষীয় আমেরিকান সমর্থনকে অস্বীকার করছে ট্রাম্পের প্রস্তাব... কংগ্রেসকে অবশ্যই এই বিপজ্জনক এবং বেপরোয়া পরিকল্পনার বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে।
সিএআইআর, মার্কিন মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপ: কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) নামের এই গ্রুপ বলেছে, গাজা কেবল ফিলিস্তিনিদের, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নয়। গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বান একটি নিখুঁত পরিকল্পনা।
সিএআইআর বলেছে, ‘যদি ফিলিস্তিনি জনগণকে কখনো কোনোভাবে জোর করে গাজা থেকে বহিষ্কার করা হয়, তাহলে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেখানে ব্যাপক সংঘাতের সূত্রপাত করবে, আন্তর্জাতিক আইনের কফিনে শেষ পেরেক মারবে এবং আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংস করে দেবে।
রাশিয়া: রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত করার চেষ্টা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্মিলিত শাস্তির নীতি চর্চা করার এমন পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করছে রাশিয়া।
চীন: চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার জনগণের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করছে বেইজিং। একই সঙ্গে সব পক্ষই ফিলিস্তিনি ইস্যুকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতিকে রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করে চীন।
তুরস্ক: তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য একেবারে অগ্রহণযোগ্য। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সমীকরণের বাইরে রেখে যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা আরও সংঘাতের সৃষ্টি করবে।
ফিদান বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তুরস্ক যে পদক্ষেপÑ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন ও রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানোর—নিয়েছিল তা পর্যালোচনা করা হবে।
ফ্রান্স: ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর যেকোনো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে প্যারিসের বিরোধিতাকে পুনর্বিবেচনা করছে ফ্রান্স। ট্রাম্পের এই ধরনের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার ওপর আক্রমণের শামিল। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ক্ষেত্রে এটি বড় বাধা। একই সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার মিসর এবং জর্ডানের পাশাপাশি পুরো অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে এই পরিকল্পনা।
লেমোইন বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ কেবল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া উচিত। এটি তৃতীয় কোনও দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাছে; যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উভয়ই শান্তি ও সুরক্ষায় থাকতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতি সমর্থন করেছি, আমরা জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছি এবং আমরা গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের পক্ষে সমর্থন করেছি। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করছি না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী পরিচালক পল ও’ব্রায়েন বলেছেন, গাজা থেকে সকল ফিলিস্তিনিকে অপসারণ করা হলে তা মানুষ হিসাবে তাদের ধ্বংস করার সমতুল্য হবে। গাজা তাদের বাড়ি। গাজার মৃত্যু ও ধ্বংস ইসরায়েলি সরকারের হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার চূড়ান্ত ফল। আর এই হত্যাযজ্ঞে প্রায়ই মার্কিন বোমার ব্যবহার হয়েছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com