ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণ জানেন
প্রকাশ : ২৬-০৫-২০২৫ ১১:৫৮

ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
আমাদের দেশে এমন অনেক দেশি ফল রয়েছে, যেগুলোর পুষ্টিগুণ অসাধারণ হলেও সেগুলোর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের খুব বেশি জানাশোনা নেই। শহরাঞ্চলে এসব ফল অনেকটাই অপ্রচলিত থেকে গেছে। তেমনই একটি ফল হলো ডেউয়া।
এটি গ্রামাঞ্চলে বেশ পরিচিত হলেও শহরের মানুষের কাছে এখনো অপরিচিতই বলা যায়। অঞ্চলভেদে কেউ একে ডাকে ঢেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউফল কিংবা ঢেউফল নামে।
এই ফল দেখতে কাঁঠালের খুদে সংস্করণের মতো হলেও এর আকৃতি এবড়োখেবড়ো, বাইরের আবরণ শক্ত এবং ভেতরের কোষগুলো হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে রং ধারণ করে হলুদ বর্ণের। আর ভেতরের শাঁস পাকলে হয় লালচে হলুদ। কাঁচা ডেউয়া খেতে টক, তবে পাকলে এর স্বাদ হয়ে যায় অন্যরকম— না মিষ্টি, না পুরোপুরি টক— একটা স্বতন্ত্র স্বাদ অনুভব করা যায়। এ ফল কাঁচা বা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়, আবার রান্না করেও উপভোগ করা যায়।
এক সময় গ্রামে-গঞ্জে ডেউয়া গাছের ছায়ায় বসে ফল খাওয়া ছিল সাধারণ চিত্র। কিন্তু বর্তমানে ফলটির চাহিদা কমে যাওয়ায় এর চাষও দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এই দেশি ঐতিহ্যবাহী ফল। অথচ পুষ্টিগুণের বিচারে এটি কাঁঠালের সঙ্গে তুলনীয় এবং অনেকক্ষেত্রে তা ছাড়িয়েও যায়।
ডেউয়া ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ৬৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৩ দশমিক তিন গ্রাম শর্করা এবং শূন্য দশমিক সাত গ্রাম আমিষ। খনিজ উপাদান রয়েছে শূন্য দশমিক আট গ্রাম; যা শরীরের নানা প্রয়োজনীয়তায় সহায়ক। এ ছাড়া এতে আছে ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং শূন্য দশমিক পাঁচ মিলিগ্রাম লৌহ। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান ভিটামিন সি এতে পাওয়া যায় ১৩৫ মিলিগ্রাম পরিমাণে; যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক বেশি। ভিটামিন বি১ এবং বি২ এরও উপস্থিতি রয়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ০২ ও শূন্য দশমিক ১৫ মিলিগ্রাম পরিমাণে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে—৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিগ্রাম, যা হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর।
শুধু পুষ্টিগুণেই নয়, ডেউয়া ফলের রয়েছে নানা ভেষজ উপকারিতা। এটি নিয়মিত সেবনে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, বিশেষ করে ঠান্ডা পানির সঙ্গে এর রস মিশিয়ে পান করলে তা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এমনকি ফলটি শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়ার ব্যবস্থাও করা যায়। যারা বমিভাবে ভোগেন, তাদের জন্য ডেউয়ার টক-মিষ্টি স্বাদ আরামদায়ক ও উপকারী।
এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ডেউয়া কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আট থেকে ১০ গ্রাম কাঁচা ডেউয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। হাড় ও দাঁতের গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এর পাশাপাশি উচ্চ পটাশিয়াম হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যাদের রুচি কমে গেছে বা মুখে খাবার ভালো লাগছে না, তাদের জন্য ডেউয়া হতে পারে প্রাকৃতিক ও সহজ সমাধান। সামান্য লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে ডেউয়ার রস খেলে মুখে রুচি ফেরে। পেটের গ্যাস বা বায়ুর সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় এই ফলে। এক থেকে দেড় চামচ পাকা ডেউয়ার রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে এক সপ্তাহ সেবনে পেটের অস্বস্তি দূর হয়।
ত্বকের যত্নেও ডেউয়া বিশেষভাবে উপকারী। ডেউয়া গাছের ছালের গুঁড়া ব্রণের পুঁজ বের করে দিতে সহায়তা করে এবং ত্বকের রুক্ষতা হ্রাস করে কোমলতা ফেরাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও এই ফলের ব্যবহার প্রচলিত। মরিচ, লবণ ও চিনি দিয়ে ডেউয়ার ভর্তা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং তাপঘাত এড়ানো যায়।
এ ফল খেলে শুধু শরীরিক উপকারেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। অতিরিক্ত তৃষ্ণা কমাতে কার্যকর, যকৃতের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং পিত্ত ও লিভারের নানা সমস্যা প্রতিরোধেও ডেউয়া ফল কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এইভাবে নানা গুণে গুণান্বিত ডেউয়া ফলটি একসময় আমাদের গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। আজ তা হারিয়ে যাওয়ার পথে। অথচ সামান্য সচেতনতা, চাষে উৎসাহ এবং পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে এই দেশি ফলটির আবার ফিরে আসতে পারে হারানো গৌরব। আমাদের প্রাচীন খাদ্য ঐতিহ্যের এই পুষ্টিকর অংশকে যদি এখনই গুরুত্ব না দিই, তাহলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই ফলকে শুধুই ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাব।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com