weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থমথমে গোপালগঞ্জে চলছে কারফিউ, যৌথবাহিনীর হাতে আটক ১৪

প্রকাশ : ১৭-০৭-২০২৫ ১২:০৩

ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে বুধবার দিনভর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাত থেকে চলছে কারফিউ। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার রাত পেরিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে সেখানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটকের পর গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া কারফিউর কারণে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার পর শহরে মানুষের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। নিতান্ত কিছু মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। হাট-বাজার জনমানবহীন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি।

তবে আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাদের টহলও দেখা যায়নি। তবে জেলা কারাগারের সামনে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে বুধবার দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ এনসিপি নেতা-কর্মীদের। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চার জন নিহত এবং অন্তত নয় জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

আজ সকালে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পড়ে আছে ইটপাটকেল, বাঁশসহ যান চলাচলে নানা প্রতিবন্ধক সামগ্রী। সড়কের পাশে থাকা গাছ কেটে রাস্তার উপর ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে দেখা গেছে বেশ কিছু স্থানে। আবার সড়ক–মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন তোরন ভেঙে ফেলায় রাস্তার উপর সেগুলো যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সকাল ৭টায় গোপালগঞ্জ শহরের ঘোনাপাড়া মোড়সংলগ্ন গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের সামনের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপর পড়ে থাকা একটি রেইনট্রি গাছ কেটে সরিয়ে নিতে করতে দেখা যায় এক নারীকে। রোজিনা বেগম নামের ওই নারী বলেন, সকালে হাঁটতে বেরিয়ে রাস্তার উপর গাছটি পড়ে থাকতে দেখি। রাতে কেউ হয়তো কেটে রাস্তায় ফেলেছে। আমি বাদাম বিক্রি করি। কয়টা ডালপালা কেটে নিচ্ছি সংসারের কাজে।

সেখানে রাস্তার একটি সরু অংশ ছাড়া পুরোটাই ওই গাছের কারণে প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। পাশের সরু জায়গা দিয়েই চলছে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। তবে ভোর থেকেই ঘোনাপাড়া মোড়ে ইজিবাইক মাহিন্দ্রা ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। কম হলেও বিভিন্ন গন্তব্যে এসব যানবাহন চলাচল করছে। তবে স্থানীয় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো কারফিউয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে।

সকাল ৮টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। শহরের ঘোনাপাড়া, এলজিইডি মোড়, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, কোট চত্বর, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার ও পুলিশ লাইনস মোড় ঘুরে কোথাও কোনো চেকপোস্ট বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার সামনে কয়েকজন গ্রাম–পুলিশের সদস্য ও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। 

এদিকে কারফিউয়ের কারণে স্থানীয়ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের পুলিশ লাইনস মোড় এলাকার পরিবহনশ্রমিক আজগার আলী শেখ বলেন, কারফিউর কারণে রাস্তায় লোকজন নেই, তাই লোকাল গাড়িগুলো চলছে না। এখান থেকে স্থানীয় দুটি রুটে বাস চলে— গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জ-ব্যাশপুর। এই দুই রুট ছাড়াও গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া-পয়সারহাট রুটেও বাস চলছে না। তবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবেই।’

এর আগে বুধবার দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ছিল এনসিপির।

সকালে এনসিপি নেতাকর্মীরা শহরের পৌর পার্ক মাঠে কর্মসূচি শুরুর আগেই সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়। এনসিপি নেতাদের শহরে ঢোকার পরের পরিস্থিতি সামলাতে সাজোঁয়া যান নিয়ে নামতে হয় সেনা সদস্যদের। ছিল বিজিবির চার প্লাটুন সদস্য।

সকালে শহরের উলপুর ও টেকেরহাটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পর বেলা দেড়টার দিকে পৌর পার্কের সমাবেশ মঞ্চে হামলা হয়। কিছুক্ষণ পর মঞ্চে ফিরে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে পুলিশ ও সেনা পাহারায় মাদারীপুরের দিকে রওনা দিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা লঞ্চঘাট এলাকায় হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষের পর অন্তত চারজনের লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনার খবর আসে। আহত আরো ১৫ জনকে আনার তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকালে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তাতেও কাজ না হলে সন্ধ্যার পর জারি করা হয় কারফিউ।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

আরো পাঁচদিন বৃষ্টির শঙ্কা, কমবে দিনের তাপমাত্রা আরো পাঁচদিন বৃষ্টির শঙ্কা, কমবে দিনের তাপমাত্রা রাজধানীর শ্যামলীতে ছিনতাই: চাপাতি-বাইকসহ গ্রেপ্তার ৩ রাজধানীর শ্যামলীতে ছিনতাই: চাপাতি-বাইকসহ গ্রেপ্তার ৩ উদীচী সভাপতি বদিউর রহমান মারা গেছেন উদীচী সভাপতি বদিউর রহমান মারা গেছেন ইরাকের শপিংমলে ভয়াবহ আগুনে ৫০ জনের মৃত্যু ইরাকের শপিংমলে ভয়াবহ আগুনে ৫০ জনের মৃত্যু থমথমে গোপালগঞ্জে চলছে কারফিউ, যৌথবাহিনীর হাতে আটক ১৪ থমথমে গোপালগঞ্জে চলছে কারফিউ, যৌথবাহিনীর হাতে আটক ১৪