weather ২৬.৯৯ o সে. আদ্রতা ১০০% , বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এনসিপির সমাবেশ ঘিরে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষ

গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র , নিহত ৪

প্রকাশ : ১৭-০৭-২০২৫ ০০:০৬

ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। হাসপাতাল, পুলিশ ও পরিবার সূত্র এ কথা জানিয়েছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন তালুকদার (২৪)।

বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস নিহতের তথ্য নিশ্চিৎ করেন। তিনি বলেন, আরো অনেককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের অস্ত্রোপচার চলছে।

নিহত দীপ্ত সাহার চাচা হাসপাতালে বলেন, দীপ্ত দুপুরের খাবার খেয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন। শহরের চৌরঙ্গীতে তার পেটে গুলি লাগে।

নিহত রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী বলেন, আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলছে। আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। আমি আমার সন্তানকে কোথায় পাব?

নিহত সোহেল মোল্লা গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গী এলাকার কেরামত আলী প্লাজায় মোবাইল ব্যবসায়ী ছিলেন। তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন একই মার্কেটের দোকানদার জনি খান।

একটি সূত্র জানায়, নিহত ইমন তালুকদার সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের আজাদ তালুকদারের ছেলে। তিনি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ করতেন। স্থানীয় সাংবাদিক এবং প্রত‍্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ কর্মী সন্দেহে সেনাবাহিনীর সদস‍্যরা তাকে আটক করে মারধর করেন। পরে তারা তার বুকে, মুখে, গলায় সজোরে লাথি দিতে থাকেন এবং রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান। সন্ধ‍্যার পরে তার লাশ পাওয়া যায় হাসপাতালে। এ সময় তার উরুতে একটি গুলির দাগ দেখা যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এর আগে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলা চালান। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

হামলার ঘটনার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তারা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন, পরিস্থিতি ঠিক নেই।

এদিকে সর্বশেষ হামলার মুখে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া এনসিপির নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে (এপিসি) করে সেখান থেকে বের হন। পরে তারা সাঁজোয়া যানে করেই গোপালগঞ্জ ছাড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।

গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করার কথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে সাধারণ জনগণ কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে আরো বলেছেন, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সবকিছু মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষা কেবল ওই জেলার জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে সমাবেশ শুরুর আগে ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে যান। সে সময় মঞ্চের আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে দ্রুত আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। একই সময়ে মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে থাকা এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দৌড়ে সরে যান। যারা হামলা চালান, তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে এনসিপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন। ওই সময় হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।

একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশ এক হয়ে ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে সমাবেশ করে এনসিপি। সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের সদর উপজেলার কংশুরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, গাড়ি পোড়ানোর সময় সেখানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. পিয়ালকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, 'আমরা পিয়াল ভাইয়ের সঙ্গে আছি।'

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র , নিহত ৪ গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র , নিহত ৪ মিটফোর্ডে লাল চাঁদ হত্যার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব: ডিএমপি মিটফোর্ডে লাল চাঁদ হত্যার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব: ডিএমপি কাঠগড়ায় আসামির আত্মহত্যা চেষ্টা কাঠগড়ায় আসামির আত্মহত্যা চেষ্টা বনানীতে নয় বছরের পথশিশুকে ধর্ষণ, মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার বনানীতে নয় বছরের পথশিশুকে ধর্ষণ, মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হলো ‘নৌকা’ ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হলো ‘নৌকা’