weather ২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে বিনিয়োগে বড় বাধা পাঁচটি: আইএফসির প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৯-০৪-২০২৫ ১১:৩৩

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগে পিছিয়ে আছে। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। এমন সমীকরণ ও বাস্তবতার মাঝে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ তথা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো পাঁচটি বড় বাধা রয়েছে। এগুলো হলো বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার।

বাংলাদেশের বেসরকারি খাত নিয়ে ‘কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক (সিপিএসডি)’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিনিয়োগ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চার দিনের এ বিনিয়োগ সম্মেলনের মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় দিন।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বাধা আগের মতোই রয়েছে, অবস্থার তেমন উন্নতি কিংবা পরিবর্তন হয়নি।

আইএফসির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর বলেন, প্রতিবেদনে সঠিক তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই এ প্রতিবেদন দেখে থাকবেন। সুতরাং এই চ্যালেঞ্জগুলো যেন ভবিষ্যতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে কোন দেশ কত বিদেশি বিনিয়োগ পায়, তা তুলে ধরা হয়। সংস্থাটির ২০২৪ সালের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পৌনে দুই শতাংশ কমলেও বাংলাদেশের কমেছে পৌনে ১৪ শতাংশ।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। অন্যদিকে ভারত দুই হাজার ৮১৬ কোটি, ভিয়েতনাম এক হাজার ৮৫০ কোটি, ইন্দোনেশিয়া দুই হাজার ১৬৩ কোটি, কম্বোডিয়া ৩৯৬ কোটি ও পাকিস্তান ১৮২ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পায়।

আইএফসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক চার শতাংশ (২০২৩)। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে গতি প্রত্যাশা করে তার বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগের হার অপর্যাপ্ত। বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করছে না। যে বিনিয়োগ আসছে, তা মূলত দেশে ব্যবসারত বিদেশি কোম্পানিগুলোই করছে। নতুন কোম্পানি কম আসছে।

আইএফসির প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগ জরিপ ২০২৪–এর বরাত দিয়ে বলা হয়, এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রণমূলক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন, সুশাসনের অভাব, আইনের জটিলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদেরা এ হারকে অপ্রতুল মনে করেন এবং তা কয়েক বছর ধরে কমছে।

আইএফসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের কৌশলগত চারটি খাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপ নিলে প্রতিবছর এসব খাতে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। খাত চারটি হলো আবাসন, পেইন্ট অ্যান্ড ডাইস, তৈরি পোশাকশিল্প ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আবার শিল্পের রঙের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে; শুল্কের হারও অনেক বেশি। ডিজিটাল আর্থিক সেবায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মার্চেন্টদের লেনদেন সীমা বাড়ানোর মতো কিছু জটিলতা আছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে।

আইএফসি তাদের প্রতিবেদনে আরো বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে শুল্কহার বেড়ে যাবে। কারণ, তখন পণ্য রপ্তানিতে বর্তমান বাজার–সুবিধা থাকবে না। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক বাড়বে। ফলে প্রধান বাজারগুলোয় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশ ও শ্রমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে বিনিয়োগ করতে হবে।

আইএফসির প্রতিবেদন প্রকাশের পরে অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পৃথক প্যানেল আলোচনা হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। প্যানেল আলোচনা দুটি সঞ্চালনা করেন আইএফসির বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে আইএফসির সুপারিশগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ— এমন প্রশ্ন করা হয় লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আইএফসির প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই এসব সমস্যা রয়েছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমান এসব সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান বাড়ানো। আইএফসির এসব সুপারিশ সরকারের কাজে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ জহির দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অবকাঠামো অন্যতম বড় সমস্যা। এটি সমাধান করা গেলে বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিমাণ দু-তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরিবহন ও সরবরাহ খাত, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন পরিষেবা এবং শুল্ক-কর নিয়েও নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সব কটি সমস্যাই সমাধানযোগ্য। তবে এ জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনকশা থাকা আবশ্যক।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন ও এবিসি রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রাবন্তী দত্ত আলোচনা করেন আবাসন খাত নিয়ে।

শ্রাবন্তী দত্ত বলেন, ঢাকা শহরে জমির অতিরিক্ত দামের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে আবাসনসুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি চলে যায় জমির খরচ হিসেবে। অবশ্য ঢাকার বাইরে কম দামে জমি পাওয়া যায়; কিন্তু যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা কম থাকায় এ ধরনের আবাসনের চাহিদা কম থাকে। এ ক্ষেত্রে আবাসন কোম্পানিকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, দীর্ঘ মেয়াদে মর্টগেজ (জামানত রেখে ঋণ) সুবিধা দেওয়া, করছাড়, প্রণোদনাসহ বেশ কিছু নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আবাসনের জন্য স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। গৃহঋণে সুদহার কম থাকায় ব্যাংকগুলো তাতে কম আগ্রহী হয়। এ ছাড়া আইনি অনেক জটিলতাও রয়েছে। এ জন্য সরকারকে গৃহঋণের জন্য পৃথক আরও প্রতিষ্ঠান তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে নিপ্পন পেইন্টের হেড অব অপারেশনস অরুণ মিত্রা বক্তব্য দেন।

ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। গত দুই দিনে বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) ও মিরসরাইয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জে জাপানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠার কাজ চলতে থাকা বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শনে যান।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দুটি বিষয় বেশি জানতে চাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করলে সরকার কী সুবিধা দেবে, সেটি জিজ্ঞাসা করছেন। মূলত লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটি তাদের জানার মূল বিষয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

নগর ভবনে আন্দোলনের ১৫তম দিনে অংশ নিয়েছেন ইশরাক নগর ভবনে আন্দোলনের ১৫তম দিনে অংশ নিয়েছেন ইশরাক সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ১১ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা, সতর্কতা ১১ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা, সতর্কতা কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আজও চালু হয়নি সেবা চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আজও চালু হয়নি সেবা