নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রকাশ : ২৩-০৬-২০২৫ ১২:১৫

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত দুই দশকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি রুখতে যুক্তরাষ্ট্র নানা কৌশল গ্রহণ করলেও সামরিক হামলার পথটি তারা বরাবরই পরিহার করে এসেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, গোপন নাশকতা, সাইবার আক্রমণ ও কূটনৈতিক আলোচনার মতো জটিল কৌশলে দেশটি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত চারজন প্রেসিডেন্ট সতর্কভাবে এই ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সে কৌশল পুরোপুরি বদলে গেছে।
গত শনিবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইরানে হামলা চালিয়ে এক ঐতিহাসিক ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর আগে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের হামলাটি ছিল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অভিযানের অংশ, যার সূত্রপাত ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানে চালানো হামলার মাধ্যমে। এরপর দুই দেশ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলায় লিপ্ত রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায় যেসব ইরানি নেতা ও সামরিক কর্মকর্তা প্রাণে রক্ষা পান, তাদের কেউ কেউ এখন দেশটির পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে উদ্যোগী হতে পারেন— এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন ট্রাম্প। তিনি বারবার বলে আসছিলেন, এই ঝুঁকি তিনি নিতে পারবেন না।
এই উদ্বেগের মধ্যেই ট্রাম্প আচমকা ও তীব্রভাবে জবাব দেন। তিনি পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে বি-২ বোমারু বিমান পাঠিয়ে ইরানের সবচেয়ে নিরাপদ ও গভীর স্থাপনায় আঘাত হানার নির্দেশ দেন। হামলার লক্ষ্য ছিল ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র— ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম, যা এতটাই গভীরে অবস্থিত যে সেখানে ইসরায়েলের পক্ষে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সরাসরি কোনো শত্রুর পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিরল। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় মেয়াদে এটি তার নেওয়া সবচেয়ে বড় এবং সম্ভবত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি এখন এমন এক জুয়া খেলছেন, যার পরিণতি অনির্দেশ্য।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে অসংখ্য সামরিক ঘাঁটি। এসব ঘাঁটিতে অবস্থান করছে ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা। এই সামরিক উপস্থিতি এখন ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার আওতায় এসব ঘাঁটি পুরোপুরি পড়ছে।
ট্রাম্পের হিসাব, যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট সামরিক শক্তিধর এবং এসব আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম। তবে ইরান দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি যুদ্ধের বদলে ছায়াযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ ও সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার কৌশল অনুসরণ করে এসেছে। ট্রাম্প হয়তো বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলি হামলায় ইরান ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তিনি যদি দ্রুত ও শক্তভাবে আঘাত করেন, তাহলে ইরানকে ওই পরিচিত কৌশলগুলো থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে।
এই আক্রমণ ও এর পরিণতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও উদ্বেগ। সিনেটর জ্যাক রিড, যিনি মার্কিন কংগ্রেসের আর্মড সার্ভিসেস কমিটিতে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য। তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিপজ্জনক ঝুঁকি নিয়েছেন। তিনি বলেন, এখনো কেউ জানে না, ট্রাম্প তার এ বাজিতে জিতবেন কিনা। একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, যুদ্ধ শুরু করা যতটা সহজ, তা শেষ করা ততটা নয়।
এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু ইরান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপথ আমূল বদলে দিতে পারে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নির্ভর করবে আসন্ন কয়েক দিনের কূটনৈতিক তৎপরতা ও সামরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com