যুদ্ধবিরতির পরও পাক-ভারত বাকযুদ্ধ থামেনি

প্রকাশ : ০১-০৬-২০২৫ ১০:৪৩

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গত ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতি সাময়িকভাবে থেমে গেলেও, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ও সামরিক কর্তৃপক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তুলছে এবং নিজেদের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমন এক সময়ে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার ইরান সফরের সময় এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান শান্তির পক্ষে এবং জলবণ্টন, বাণিজ্য ও সন্ত্রাস মোকাবিলা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত— যদি ভারত এই আলোচনাকে গুরুত্ব দেয়। তবে দুই দেশের মধ্যে চিরবিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যু আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মাধ্যমে।

ভারত সরকার কাশ্মীর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান আবারো স্পষ্ট করে জানায়। নয়াদিল্লির বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে যদি কোনো আলোচনা হয়, তবে তা সন্ত্রাসবাদ দমন ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক অনুষ্ঠানে বলেন, পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা ভারতের পরিবারেরই অংশ এবং একদিন তারা স্বেচ্ছায় ভারতের মূলধারায় ফিরে আসবে। তার মতে, সেখানে কিছু মানুষ ভুল বোঝানো হয়েছে, তবে অধিকাংশ মানুষ ভারতের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করেন।

ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা দ্বিপাক্ষিক হবে এবং তা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর খালি করার বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভারতের কাছে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই এবং যেসব সন্ত্রাসবাদের তালিকা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে, সেসব অভিযুক্তদের ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে।

এর জবাবে ইসলামাবাদও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেন, কাশ্মীর নিয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয় এবং পাকিস্তান কখনোই কাশ্মীর ছেড়ে দেবে না। তার মতে, সন্ত্রাস ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং তা দেশটির সংখ্যালঘুদের— বিশেষত মুসলমানদের বিরুদ্ধ বৈষম্যমূলক আচরণের ফল। পাশাপাশি তিনি কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক ইস্যু বলে অভিহিত করেন এবং জানান, পাকিস্তান কাশ্মীরিদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে কখনো ভুলে যাবে না।

পাকিস্তানের সামরিক প্রধান ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগও তোলেন। তার ভাষায়, পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মকে শেখাতে হবে তারা হিন্দুদের থেকে আলাদা এবং নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, চিন্তা ও উদ্দেশ্যে ভিন্ন একটি জাতি।

অন্যদিকে, ভারত আবারো পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের রপ্তানিকারক হিসেবে অভিহিত করে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেন, পাকিস্তান এখন বুঝে গেছে যে সন্ত্রাসবাদের মূল্য তাদের চড়া করেই দিতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের সন্ত্রাস দমন কৌশল ও প্রতিক্রিয়া এখন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে এবং এতে পাকিস্তানের ক্ষতি হচ্ছে।

দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ার প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালে স্থগিত হওয়া সিন্ধু জলচুক্তিও আবার আলোচনায় এসেছে। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, যতদিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়, ততদিন এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না। জল ও রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না— প্রধানমন্ত্রীর পুরনো এই বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এদিকে, বালুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেছেন আসিম মুনির। তিনি দাবি করেন, সেখানকার সন্ত্রাসীরা আসলে ভারতের তৈরি সমস্যা, যারা পাকিস্তানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উচিত এদের প্রচার ও প্ররোচনার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং সংবিধানের অধীনে থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত জনকল্যাণে কাজ করা।

ভারত অবশ্য বালুচিস্তান প্রসঙ্গে পাকিস্তানের এসব অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছে। ইসলামাবাদ যেখানে এই অঞ্চলকে হিন্দুস্তান সৃষ্ট সমস্যা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, নয়াদিল্লি তা উপস্থিত সত্যের বিকৃতি বলেই দেখছে।

সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা, বাকযুদ্ধ ও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ প্রমাণ করে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও পারস্পরিক অবিশ্বাস, রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ ও কাশ্মীর ইস্যুতে অনমনীয় অবস্থান এখনো অটুট রয়ে গেছে। আলোচনার টেবিলে বসার কথা বললেও, বাস্তবে দুই দেশই কঠোর অবস্থান নিয়ে একে অপরকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --

CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

সর্বশেষ
জনপ্রিয়