রাজধানীর বাজারে সবজি-মুরগির দাম কম, মাছ চড়া
প্রকাশ : ১৩-০৬-২০২৫ ১৫:৫৭

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহার ছুটি প্রায় শেষের দিকে। ঈদের দীর্ঘ ছুটির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয়। নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি যেমন কম, অন্যদিকে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগমুহূর্তে মুরগি, শসাসহ কিছু পণ্যের যে দাম বেড়েছিল, সেটিও কমেছে।
গত শনিবার ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটি রয়েছে; যা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার (১৪ জুন)। লম্বা এই ছুটিতে যারা রাজধানীর বাইরে গেছেন, তাদের অনেকে এখনো ঢাকায় ফেরেননি। সবজি, মাছ ইত্যাদি ছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ–শৃঙ্খলও সেভাবে সচল হয়নি।
বিক্রেতারা জানান, ক্রেতা কম থাকায় গত কয়েক দিনেই খুবই ঢিলেঢালাভাবে বিক্রি হয়েছে। তবে আজ শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে বেচাকেনা ভালোভাবে শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
আজ রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। মাংস, চালসহ বেশিরভাগ পণ্যের অনেক দোকানই বন্ধ।
কোরবানি ঈদের আগমুহূর্তে মুরগিসহ কাঁচা শাকসবজির যে দাম বেড়েছিল, সেটিও কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়; যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়।
একইভাবে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি কক মুরগি (সোনালি) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।
বাজারগুলোতে বেশিরভাগ গরু ও খাসির মাংসের দোকান ছিল বন্ধ। দু-একটি দোকানে আগের মতো ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়।
বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানির পর মাংসের চাহিদা কমে যায়। এ জন্য মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ-পরবর্তী বাজারে মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় মাছ, মুরগি ও ডিমের বাজারে ফিরেছে স্বাভাবিক গতি। সাশ্রয়ী মূল্য, স্বস্তি এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকায় এই তিনটি পণ্যই হয়ে উঠেছে শহরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভরসার জায়গা। বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য থাকলে আগামী কয়েকদিনে মূল্য আরো স্থিতিশীল হবে বলেই মনে করছেন বিক্রেতারা।
বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। আগের মতোই চড়া মাছের দাম।
বাজারে প্রতিকেজি গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। মাঝারি আকারের বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। কেজি প্রতি রুই, কাতল ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রতিকেজি কই ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল, আলু, ডাল, তেল- আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগরসহ বেশিরভাগ মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকায়। প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২২ টাকা ও পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের ছুটিতে অনেক সবজির দাম কমেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। ঝিঙা, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, কাকরোল, করলা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পটোল, চিচিঙা, ধুন্দল, লতির মতো সবজি। আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ও জালি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
ঈদের আগের রাতে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় সালাদ বানানোর বিভিন্ন পণ্যের দাম। শসা, লেবু, কাঁচা মরিচ, টমেটো, গাজরের দাম বেড়ে যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। প্রতি কেজি শসা ও কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে শীতকালীন সবজি প্রতি কেজি টমেটো আগের মতোই ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-১২ নম্বর হাজি কুজরত আলী শপিং কমপ্লেক্স সংলগ্ন পোলট্রি বাজারে কথা হয় ব্যবসায়ী শামসুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের আগে মুরগি বিক্রির চাপ ছিল। দামও বেশি ছিল, এখন আবার কয়েকদিন বাজার স্বাভাবিক। আগামী রবিবার ও সোমবার বেচাকেনা বাড়বে।
একই বাজারে আরেক বিক্রেতা বলেন, এখন বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের জন্য মুরগি বিক্রি হচ্ছে বেশি। খুচরা ক্রেতা ঈদের আগে কিনে রেখেছেন, এজন্য দাম কম হলেও বিক্রি নেই।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে স্কুলশিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন বলেন, ঈদের পর পরিবারে আর কেউই মাংস খেতে চাচ্ছে না। গরু-খাসির মাংসে যেন অনেকটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাই সোনালি ও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। মুরগির দামটা আমার কাছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশ কমই মনে হয়েছে। মোটামুটি সস্তা হওয়ায় এখন মুরগির মাংস সবাই খেতে পারে।
একই বাজারে মুরগি বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর দুই দিন বিক্রি একেবারে থেমে গিয়েছিল। এখন আবার একটু গতি এসেছে। দামও একটু কমে এসেছে, সেটি ভালো লক্ষণ। তবে দেশি মুরগিতে আগ্রহ কম, দাম বেশি, তাই মানুষ হাতই দিচ্ছে না।
রামপুরা বাজারে আকবর হোসেন নামক এক ক্রেতা বলেন, ঈদের পর মন চাচ্ছে হালকা কিছু খেতে। মাংস খেতে খেতে হাঁপিয়ে গেছি। এখন বাজারে এসে রুই মাছ কিনেছি। দামটা একটু কমতি দেখে বেশ খুশি হলাম।
ওই বাজারেই মাছ বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, ঈদের আগে মাছ একদম চলেনি। এখন আবার চাহিদা বেড়েছে। দামও কিছুটা কম, সরবরাহ ভালো। তবে দেশি শিং-কৈ এখনো খুব দামি, কারণ এগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
মগবাজারের মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকে মাংস ঝুলিয়ে রেখেছি, বিক্রি খুব একটা নেই। সাধারণত ঈদের পর এই সময়টাতে বিক্রি কমই থাকে। ঈদের পর মানুষ মাছ-মুরগিতেই চলে গেছে। যেকারণে কেউ কেউ দাম জিজ্ঞেস করে, শুনে চলে যায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাব্বির আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকায় ফিরেছি। বাসায় মাছ, মাংস আছে; শুধু সবজি কিনতে বাজারে এসেছি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com