সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও উত্তাল সচিবালয়
প্রকাশ : ২৬-০৫-২০২৫ ১৩:১৫

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর সচিবালয় এলাকা। সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে কর্মসূচি পালনকারী কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘কালাকানুন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে— ‘অবৈধ কালো আইন মানি না, মানব না’, ‘আপস নয়, সংগ্রাম’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর থেকে নেমে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই বিক্ষোভে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, গত বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত এবং রবিবার গেজেট আকারে প্রকাশিত এই সংশোধিত অধ্যাদেশটি চার দশক আগের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ ফিরিয়ে এনেছে। এসব ধারা রাষ্ট্রীয় চাকরিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করবে এবং সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।
আন্দোলনরত কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, এই আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বা অন্য কর্মচারীদের অনুগত্যে বিঘ্ন ঘটায় বা কর্মবিরতিতে উদ্বুদ্ধ করে— তাহলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার শাস্তি হতে পারে পদাবনতি, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুতি। এমনকি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াও কাজে অনুপস্থিতি বা অন্যদের কাজ না করার জন্য উসকানি দেওয়াকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া এবং তার জবাবের ভিত্তিতে শাস্তি আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তি পাওয়ার পর কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন, তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিলের সুযোগ থাকবে না— শুধু পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির এ বিষয়ে বলেন, সরকার যদি এই কালো আইন প্রত্যাহার না করে, তাহলে আন্দোলন আরো কঠোর হবে। প্রয়োজনে সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে আন্দোলনের মধ্যেই সরকার নতুনভাবে একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া যাচাই ও সুপারিশ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বর্তমানে দেশে আনুমানিক ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যাদের সবাই আইনগতভাবে “কর্মচারী” হিসেবে বিবেচিত। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সংশোধিত এই অধ্যাদেশ রাষ্ট্রীয় চাকরিজীবীদের সংগঠিত হয়ে যৌক্তিক দাবি তোলার সাংবিধানিক অধিকারও সংকুচিত করে দিচ্ছে।
সচিবালয় কেন্দ্রিক এই আন্দোলনের অভিঘাত প্রশাসন ব্যবস্থার ওপর পড়তে শুরু করেছে। কর্মচারীরা তাদের দাবির প্রতি সরকারের সদিচ্ছা না দেখলে আন্দোলনের সময়সীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com