weather ২৬.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে ১০ বছরে ৩০৪ প্রাণহানি, অপহৃত ২০৯ জন

প্রকাশ : ২৬-০৫-২০২৫ ১৪:৩৩

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিবর্ষণ এবং নির্মম নির্যাতনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিত নিহত হওয়ায় বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে এমন অমানবিক হত্যাকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এটি এক ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যর্থতারও বহিঃপ্রকাশ।

গত ৯ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের মাছিমপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান সাইদুল ইসলাম নামের এক বাংলাদেশি নাগরিক। ঘটনার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিবি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

পরবর্তী সময়ে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন নামের এক যুবক। ছয় মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আল আমিন সীমান্তে অবৈধভাবে গরু আনার সময় গুলিবিদ্ধ হন বলে জানা যায়।

সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায়, গত ১৬ এপ্রিল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন হাসিবুল আলম নামের এক বাংলাদেশি যুবক। সীমান্তের ৮৯৪ নম্বর মেইন পিলারের পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিএসএফ সদস্যরা হাসিবুলকে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় এবং ৩৬ ঘণ্টা পর তার মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুসারে, গত এক দশকে বিএসএফের গুলিতে বা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩০৪ জন বাংলাদেশি। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৩১৬ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০৯ জন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আসকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে- ২০১৫ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ৪৬ জন, আহত ৭৩, অপহৃত ৫৯ জন। ২০১৬ সালে নিহত হন ৩১ জন, আহত ৩৯, অপহৃত ২৪ জন। ২০১৭ সালে নিহত হন ২৪ জন, আহত ৩৫, অপহৃত ৪০ জন। ২০১৮ সালে নিহত হন ১৪ জন, আহত ১৫, অপহৃত ১৩ জন। ২০১৯ সালে নিহত হন ৪৩ জন, আহত ৪৮, অপহৃত ৩৪ জন। ২০২০ সালে নিহত হন ৪৮ জন, আহত ২৬, অপহৃত ২২ জন। ২০২১ সালে নিহত হন ১৭ জন, আহত ৯, অপহৃত ৩ জন। ২০২২ সালে নিহত হন ২৩ জন, আহত ১৫, অপহৃত ১১ জন। ২০২৩ সালে নিহত হন ২৮ জন, আহত ৩১ জন। ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন এবং আহত হয়েছেন ২৫ জন, যাদের মধ্যে ৪ জন শারীরিক নির্যাতনের পর মৃত্যুবরণ করেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দিন বলেন, সীমান্তকে ‘মৃত্যুনির্ভর’ এলাকা থেকে ‘মানুষবান্ধব’ নিরাপত্তা বলয়ে রূপান্তর করতে হলে দুই দেশের সদিচ্ছা প্রয়োজন। কূটনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান ছাড়া এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা এই সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করছে।

আসকের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর আবু আহম্মেদ ফয়জুল কবির বলেন, প্রতিটি সীমান্ত হত্যাকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অমানবিক। বিএসএফের গুলিতে যে সব বাংলাদেশি মারা যান, তারা কোন পরিস্থিতিতে প্রাণ হারিয়েছেন, তা জানা রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের অধিকার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এমন হত্যাকাণ্ড আমাদের উদ্বিগ্ন করে।

তিনি আরো বলেন, যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিন সীমান্ত হত্যার একটি বড় কারণ হিসেবে গরু পাচারকে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে গরু পাচার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। পাচারকারীরা স্থানীয় অভাবী জনগণকে অর্থের বিনিময়ে রাখাল হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। কখনো কখনো তারা কাঁটাতার কেটে ভারতে প্রবেশ করে আবার গরু নিয়ে ফিরে আসে। এ সময় বিএসএফ তাদের গুলি করে।

তিনি বলেন, বিএসএফের অনেক সদস্য ‘ট্রিগার হ্যাপি’, যারা গুলি চালাতে পছন্দ করেন। এদের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ না করলে সীমান্তে সহিংসতা কমবে না। অপরদিকে, বিজিবিরও নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা উচিত, যাতে পাচার রোধ করা যায়।

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কেবল স্থলপথেই ঘটে না, নদীপথেও এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিছু সীমান্ত নদী এখনো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত না হওয়ায়, জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যান। এমন অবস্থায় বিএসএফ সদস্যরা সতর্ক না করে সরাসরি গুলি চালায়, যা অত্যন্ত অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে কিছু পদক্ষেপ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে- বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ। যৌথ টহল ও নজরদারি জোরদার। পাচার রোধে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় গুলি নয়, বরং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ। হত্যাকাণ্ডের প্রত্যেকটি ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গর্বিত অংশীদার ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গর্বিত অংশীদার ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে অভিনব প্রতারণা, চক্রের ৮ সদস্য আটক অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে অভিনব প্রতারণা, চক্রের ৮ সদস্য আটক সিলেট-সুনামগঞ্জ সীমান্তে ৮২ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ সিলেট-সুনামগঞ্জ সীমান্তে ৮২ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ আন্দোলনে অবরুদ্ধ নগরভবন, থমকে আছে সেবা আন্দোলনে অবরুদ্ধ নগরভবন, থমকে আছে সেবা চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা