কুমিল্লায় নারী ধর্ষণ ও ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় ফুঁসছে শোবিজ অঙ্গন
প্রকাশ : ২৯-০৬-২০২৫ ১৬:৪৮

ছবি : সংগৃহীত
বিনোদন ডেস্ক
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরে মব সৃষ্টি করে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীর ভিডিও করা হয়। তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও দেওয়া হয়।
সর্বশেষ এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলী ও আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সোচ্চার সাধারণ মানুষ। সবাই প্রতিবাদ জানাচ্ছে ঘটনাটির। শোবিজ তারকারাও পিছিয়ে নেই। এমন বীভৎস একটা ঘটনার প্রতিবাদে তারাও সরব। বলা যায়, রীতিমত ফুঁসছে শোবিজ অঙ্গন।
আজমেরী হক বাঁধন প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ। কিন্তু এই দেশে, এটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। মানুষ কেবল তখনই এটি নিয়ে কথা বলে, যখন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ভাইরাল হয়, একটি ভিডিও ক্লিপ, একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। তারপর হঠাৎ করেই সবাই ক্ষেপে যায়। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য। শিগগির মানুষ এগিয়ে যায়, ভুলে যায় সব। কারণ প্রতিদিন একটি নতুন নাটক, নতুন কেলেঙ্কারি। একজন মহিলার যন্ত্রণা তার আরেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা কেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে? আমরা ধর্ষণকে সংবাদের মতো বিবেচনা করি, এটিকে গুরুতর সংকটের মতো নয়? আরো খারাপ কথা, কিছু লোক এই অপরাধগুলি রেকর্ড করে, শেয়ার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদনের মতো ছড়িয়ে দেয়। তারা নির্দোষ নয়। তারা অপরাধের অংশ। এবং তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, প্রচন্ড রেগে আছি আমি এবং হ্যাঁ, আমি ভীত। কারণ আমি একজন মহিলা এবং আমি নিরাপদ বোধ করি না। বাস্তবে তো অবশ্যই, এমনকি অনলাইনেও না। ধর্ষণ তৃপ্তিদায়ক কোনো বিষয় নয়। ট্রমা নাটক নয়। আর এসবএটা চলতে পারে না।’
তমা মির্জা লিখেছেন, ‘মুরাদনগর, কুমিল্লা! বিভৎসতা! লজ্জা…!’ মিশা সওদাগর অপরাধীর ফাঁসির দাবী জানিয়ে লিখেছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকুক। প্রতিটি নারী নিরাপদে থাকুক। প্রতিটি অন্যায়ের ন্যায় বিচার হোক। প্রতিটি ধর্ষকের ফাঁসি হোক। মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করছি।’
হ্যাশট্যাগ দিয়ে আরেক চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ‘ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন।’ ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ।’ সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ।’
আরশ খান লিখেছেন, ‘কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্ম পরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সাথে এমন করা সম্ভব না। একবার জারজ সবসময় জারজই থাকে।’ মৌসুমী হামিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর কোনও মানুষ থাকবে না। খুব শিগগির।’ কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা লিখেছেন, ‘কোন দেশে আছি? এ কি দেখলাম? ঘেন্না ঘেন্না ঘেন্না, থু থু থু!’
জিয়াউল রোশান লিখেছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না। জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। আর আপনারা যারা সমবেদনা জানিয়ে সেই ভিডিওটি শেয়ার করছেন, আবার কেউ কেউ ভিউ পাবার লোভে সেই ভিডিওটা আপলোড করছেন, আপনারাও সে ধর্ষণকারীর মতোই অপরাধী। আপনারা ভিউখোর রাক্ষস। ফাজলামি ছেড়ে দেন আর অতি সত্তর এইসব ডিলেট করেন।’কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ।’
জয় চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো তাই তোমায় ভালোবাসি। আমার প্রাণের বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি! কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর সাথে যা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। যিনি ধর্ষণ করেছেন এবং যিনি পরবর্তীতে ভিডিও করে পাবলিশ করেছেন উভয়ের বিচার চাই।’
নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটা যেন একটা কৌতুক, আবার কষ্টের ট্র্যাজেডি। মনে হয়, পুরো দেশটা যেন এক বিশাল পরীক্ষাগার, আর সেই পরীক্ষার দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে এমন কারও হাতে, যার জ্ঞান নেই, দায়িত্ববোধ নেই। ঠিক যেন বান্দরের হাতে লাঠি। যার হাতে দেশের হাল, সে বুঝেই না, সে কী করছে। শক্তি আছে, ক্ষমতা আছে, কিন্তু বিচক্ষণতা নেই, দেশপ্রেম নেই। যে লাঠি দিয়ে দেশকে সামলানোর কথা, সেই লাঠি দিয়েই গুঁতো দিচ্ছে দেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর শান্তি। মানুষের ব্যথা-কষ্টের খবর কেউ রাখে না। নীতির জায়গায় এখন নীতিহীনতা, দেশের অবস্থা এমন এক নাটকের দৃশ্য, যেখানে দর্শক কাঁদছে-কিন্তু মঞ্চে যারা নাচছে, তারা বুঝতেই পারছে না, মানুষ হাসছে না, কাঁদছে। বাংলাদেশ এখন ঠিক সেই অবস্থায়, যেখানে বান্দরের হাতে লাঠি, আর দেশটা কেবল সহ্য করে যাচ্ছে।’
সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান লিখেছেন, ‘কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার হলেই আমরা খুশি হই। আমরা থেমে যাই। আমাদের থেমে যাওয়ার পরই শুরু হয় আসল প্রক্রিয়া। আলগোছে অপরাধী মুক্ত হয়। বিদেশে পালিয়ে যায়। দেশে জায়গা বদল করে। যেকোনো এক উপায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আমাদের সাথে মিশে যায়। ইতিহাস থেকে উঠে যায় অপরাধীর শাস্তি কার্যকরের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’
নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘পুলিশ এখনও (সুদিনের অপেক্ষায়) নিরাসক্ত, দায়সারা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই আগের মতোই নেতা-নেত্রী তোষণ করে উন্নতির উপায় খুঁজছে। পথেঘাটে চলতে ফিরতে গেলে এমনই বোধ হয়। বাংলাদেশে কিছুই বদলায় না। পুলিশও বদলাবে না।’
অভিনেতা সাইদুর রহমান পাভেল ফেসবুক লাইভে এসে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষকদের মেরে ফেলুন। প্রকাশ্যে ফাঁসি দিন।’ এ ছাড়া দেশের সার্বিক অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে জানিয়ে পাভেল বলেন, ‘এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটি তো আরো খারাপ হয়ে গেল। এখন দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে। এখন তো মনে হচ্ছে ভুল করেছি ভাই। ভুল করেছে সবাই।’
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com