কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ উত্তেজনা
প্রকাশ : ২৭-০৫-২০২৫ ১২:২৮

বড়াইবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের ঠেলে দেওয়া নারী-পুরুষ, সতর্কাবস্থায় বিজিবি, ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী সীমান্তে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোররাত থেকে এ উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ সময় ভারতের আসাম অংশে গুলির শব্দ ও ককটেল বিস্ফোরণও শোনা গেছে।
বড়াইবাড়ী সীমান্ত ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সাক্ষী। ওই সংঘর্ষে বিএসএফের ১৬ জন সদস্য নিহত হন এবং বিডিআরের দুজন সদস্য শহীদ হন। এই সংঘর্ষ ‘বড়াইবাড়ী যুদ্ধ’ নামে পরিচিত, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ২০০১ সালের সংঘর্ষে অংশ নেওয়া যোদ্ধা সাইফুল ইসলাম জানান, ভারতের আসামের মাইনকারচর কাকড়িপাড়া সীমান্তপথ দিয়ে আজ ভোরে ১৪ জন (নয় জন পুরুষ ও পাঁচ জন নারী) নাগরিককে গেট খুলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
বিজিবি ও স্থানীয়রা বাধা দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ রাবার বুলেট ছোড়ে ও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সাইফুল বলেন, তারা তাদের নাগরিকদের জোর করে আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এটি চরম অন্যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বড়াইবাড়ী যুদ্ধের প্রবীণ যোদ্ধা রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ঠেলে দেওয়া ১৪ জনের সবাই ভারতীয় নাগরিক। বিজিবি তাদের বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দেয়। আমি নিজে গিয়ে বিএসএফকে অনুরোধ করি তাদের ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু তারা উত্তেজিত হয়ে গুলি ছোড়ে।
স্থানীয় সাংবাদিক শাহারিয়ার নাজিম জানান, বিএসএফের ঠেলে দেওয়া নারী-পুরুষরা জানিয়েছেন, তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে ধরে প্রথমে একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ভোররাতে সীমান্তে এনে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
তাদের একজন, খাইরুল ইসলাম, নিজেকে আসামের মরিগাঁও জেলার সিপি স্কুলের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাকে ২৩ মে ধরে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। ভোরে আর ১৩ জনের সঙ্গে আমাকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। আসতে না চাওয়ায় মারধর করে, হাতে ২০০ টাকা ও একটি লাঞ্চ প্যাকেট ধরিয়ে দেয়।
সকাল ১০টা পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঠেলে দেওয়া ১৪ জন এখনো সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয় জনগণ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। অপরদিকে, বিএসএফও অতিরিক্ত সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে জামালপুর বিজিবি ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধীন রৌমারী বড়াইবাড়ী ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অধিনায়কের সরকারি নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com