weather ২৭.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাকসুতে ৩৩ বছর পর আজ ভোট

প্রকাশ : ১১-০৯-২০২৫ ১১:২১

ছবি : সংগৃহীত

জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর)। প্রায় ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে নয়বার। তারপর আর হয়নি।
১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেই নির্বাচনে ঢাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে নেন। ভোটের হার হয়ে যায় ৯০ শতাংশের বেশি।

১৯৭৩ সালের জাকসুর জিএস মোজাম্মেল হককে আল-বেরুনী হলের নিজ কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এর আগে জাকসুর প্রথম জিএস জাসদ ছাত্রলীগের শাহ বোরহানউদ্দিন ১৯৭২ সালে নারায়ণগঞ্জে খুন হন। তারা দুজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মূলত স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কোন্দলে।

১৯৭৩ সালে জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে জিএস প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। তিনি বলেন, মোজাম্মেলকে গুলি করে হত্যার পর খুনিরা চলে যাওয়ার সময় সর্বহারা পার্টির নামে স্লোগান দিয়েছিল বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন।

১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।

জাকসুর সাবেক ভিপি (১৯৯০) আশরাফউদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটুকু না কাজ করতে পেরেছি, তার চেয়ে বেশি কাজ করেছি জাতীয় পর্যায়ে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

১৯৯১ সালে আবার গণতন্ত্রে ফেরার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যখন যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই দলের ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করত এবং হল দখলে রাখত। পরাজয়ের ভয় ও হলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কায় ক্ষমতাসীনেরা ছাত্র সংসদে ভোট হতে দেননি। জাকসুতেও একই ঘটনা ঘটে।

অবশ্য জাকসুতে ১৯৯২ সালের পরের নির্বাচন বাতিল হয়েছিল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। তখনকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা জানা যায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জন্য নির্ধারিত শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন চলছিল। ওই নির্বাচন বানচালের জন্য শিক্ষকদের একটি গ্রুপ জাকসুর প্রতিনিধি ও ছাত্রদের দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। পরে সভাপতি (উপাচার্য) জাকসু ভেঙে দেন।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেখানে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টির মধ্যে ২৩টি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির। আজ জাকসুর ভোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১২ অক্টোবর।

জাকসুতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী পাঁচ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ছয় হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।

সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী নয়জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আটজন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ছয়জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

একেকটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৭৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। একজন করে প্রার্থী রয়েছে ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হবে।

জাকসুতে মোট সাতটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও তিনটি আংশিক প্যানেল রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম।

আংশিক প্যানেল দিয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ। এ ছাড়া অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।

জাকসু নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ১০ আগস্ট। নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেশির ভাগ প্রার্থী গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির (হলের অতিথিকক্ষে আদবকায়দা শেখানোর নামে নির্যাতন) বিলোপ, আবাসনসংকট সমাধান, নিরাপত্তা, পরিবহন সমস্যার সমাধান, খাবারের মান উন্নত করা, শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, দলীয় প্রভাবের ছাত্ররাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০টি। ভোট গ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহাকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিভিন্ন প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এক হাজারের বেশি পুলিশের সদস্য মোতায়ের রাখা হবে। প্রয়োজনে বাড়ানো হবে। পুলিশ সদস্যের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের বাইরের দিকে অবস্থান করবেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় ৮০টি সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দল, প্রক্টরিয়াল বডি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, একজন ভোটার কোনো কারণে ব্যালট পেপারে ভুল করলে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। তখন ওই ব্যালট পেপার বাতিল করে নতুন ব্যালট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা দেখছি না। নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করার বিষয়গুলো যখন শিক্ষার্থীদের চোখে পড়েছে, তখন তারা কমিশনের নজরে আনছে। তারা চেষ্টা করছেন দেখভাল করার। কিন্তু এত অল্প সময়ে এত কাজ করা প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক সময় হয় না। আশঙ্কার ক্ষেত্রে আমি যেটা বলি, প্রতিটি সংগঠন অংশগ্রহণ করার কারণে এবং একটা আনন্দমুখর পরিবেশে আসলে নির্বাচনটা হচ্ছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

স্বাস্থ্যের আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল মিঠু গ্রেপ্তার স্বাস্থ্যের আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল মিঠু গ্রেপ্তার ‘এইটা ডাকসু না, এক্কেবারে হিজাবসু’ ‘এইটা ডাকসু না, এক্কেবারে হিজাবসু’ এবার ইয়েমেনে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত ৩৫ এবার ইয়েমেনে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত ৩৫ বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন উপকূলে ৪০ জেলেকে অপহরণ আরাকান আর্মির বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন উপকূলে ৪০ জেলেকে অপহরণ আরাকান আর্মির দেশে ফিরতে নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে জামালরা দেশে ফিরতে নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে জামালরা