weather ২৬.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চ্যালেঞ্জের রিট মামলা খারিজ

প্রকাশ : ২৬-০৫-২০২৫ ১২:৪৪

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাই কোর্ট নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতি ফাতেমা নজিব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২৬ মে) এই আদেশ দেন।

আদালত রায়ে জানান, যেহেতু কমিশনের সুপারিশগুলো এখনো সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করা হয়নি, তাই বিষয়টি প্রিম্যাচিউর বা সময়ের আগেই আদালতের সামনে এসেছে। এই যুক্তিতেই রিট আবেদনটি খারিজ করা হয়।

রিটটি দায়ের করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী রওশন আলী। ৪ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এই আবেদন করেন, যেখানে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে আদালতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, যেন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই কমিটিতে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ইসলামি আইনজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন সংক্রান্ত ভবিষ্যতের যেকোনো সংস্কার বিষয়ে তারা মতামত ও পরামর্শ দিতে পারবেন।

রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, কমিশনের প্রতিবেদনের একাদশ অধ্যায়ে নারী ও পুরুষের জন্য সমান উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের প্রস্তাব সরাসরি কোরআনের সুরা নিসার পরিপন্থী। একই সঙ্গে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার যে সুপারিশ রয়েছে, তাও ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত বিধানের পরিপন্থী এবং সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রিটে আরো উল্লেখ করা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনে ‘মাই বডি, মাই চয়েজ’ স্লোগানকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে শরীয়তের ভিত্তি উপেক্ষা করা হয়েছে এবং নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হয়েছে।

রওশন আলী দাবি করেন, এই প্রতিবেদনে যৌনকর্মীদের পেশাকে একটি বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে; যা ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবেদনে লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার সংক্রান্ত যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা শরীয়তবিরোধী এবং দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, তার আবেদন কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। এটি দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবিধানিক ভারসাম্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়ের করা হয়েছিল। তবে আদালত মনে করে, যেহেতু এই সুপারিশগুলো এখনো কার্যকর হয়নি, তাই আইনি হস্তক্ষেপের উপযুক্ত সময় এটি নয়।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ২০২৪ সালের নভেম্বরে গঠিত হয় এবং কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে। তাদের মেয়াদ ছিল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত, তবে বিরোধিতা ও বিতর্কের মধ্যেও মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কমিশন তাদের ৩১৮ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়, যেখানে মোট ৪৩৩টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে ইসলামি উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইন সংশোধনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক ইসলামপন্থী সংগঠন কমিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। হেফাজত এই কমিশন বাতিলের দাবি জানায়, আর জামায়াত কমিশনের কয়েকটি সুপারিশকে 'গর্হিত' বলে অভিহিত করে। তাদের দাবি, এসব প্রস্তাব সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। তরুণদের একটি দল ‘এনসিপিও’ কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, এর সুপারিশগুলোতে সমাজের সব স্তরের নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়নি।

কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের সুপারিশগুলোর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সব ধর্মের নারীর জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করা। প্রতিবেদনে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, সন্তানের ওপর নারীদের সমান অভিভাবকত্বের অধিকার, সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন, বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি, নারীবিদ্বেষী প্রচার নিয়ন্ত্রণ এবং যৌনকর্মীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য না হলেও তারা ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের জন্য একটি নীতিগত রূপরেখা তৈরি করতে চেয়েছেন, যেখানে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবনায় দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহলে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যার আইনি প্রতিফলন দেখা গেল এই রিটের মাধ্যমে।

তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তে আপাতত বিষয়টি স্থগিত হলেও কমিশনের সুপারিশ এবং তা ঘিরে সমাজে চলমান বিতর্ক থেমে যাবে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। বরং তারা মনে করছেন, বিষয়টি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সামাজিক সংলাপ ও আইনগত উদ্যোগের মাধ্যমে পুনরায় সামনে আসবে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গর্বিত অংশীদার ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গর্বিত অংশীদার ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে অভিনব প্রতারণা, চক্রের ৮ সদস্য আটক অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে অভিনব প্রতারণা, চক্রের ৮ সদস্য আটক সিলেট-সুনামগঞ্জ সীমান্তে ৮২ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ সিলেট-সুনামগঞ্জ সীমান্তে ৮২ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ আন্দোলনে অবরুদ্ধ নগরভবন, থমকে আছে সেবা আন্দোলনে অবরুদ্ধ নগরভবন, থমকে আছে সেবা চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা