২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৩% , শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রমজানে দ্রব্যমূল্যের দিকে বিশেষ নজর রাখবেন, কর্মকর্তাদের প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশ : ৩০-১২-২০২৪ ২৩:৩৩
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন বছরে শৃঙ্খলভাবে যেন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়, সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পুলিশের যারা অপরাধে জড়িত তারা শাস্তির আওতায় আসবে। এ ছাড়া কৃষক যেন বীজ ও সার সংকটে না পড়ে সে নির্দেশও দেন তিনি।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হয়ে এসব নির্দেশ দেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই ভিডিও কনফারেন্সে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, সার সরবরাহ ও শিল্প এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন বাদে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে। এরপর গতকাল সোমবারই প্রথম মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে অংশ নেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ পুলিশ প্রধান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের ১৯ কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন। বাকি চার বিভাগের ৩৩ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের মতবিনিময় পরে অনুষ্ঠিত হবে।
কনফারেন্সে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও মতামত আগামী দিনে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটি আমার জন্য প্রথম সুযোগ ছিল, আপনাদের সঙ্গে কথা বলার। অনেক কিছু শিখলাম, অনেক বিষয়ে নিজেকে অবহিত করলাম। এটি আমাদের কাজে সহায়ক হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সামনেই রমজান আসছে। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারমূল্যের দিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর রাখবেন। শুধু বাজারমূল্য নয়, জিনিসপত্র আনা-নেওয়া আরো কীভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়েও কাজ করবেন।’
সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার যে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন খুব শিগগির তাদের প্রতিবেদন দেবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এসব প্রতিবেদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। নাগরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনের একটি আবহও তৈরি হবে।
প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা যায়।
বই বিতরণ নিয়ে মানুষ যেন ক্ষুব্ধ না হয়
মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বই বিতরণ হবে, সেটি নিয়ে নানা কথা উঠবে। কেউ বই পেল না। উপরের থেকে বই বিতরণের যে ব্যবস্থা আছে- সেটি যদি প্রপার নাও হয়, বই ঠিক মতো আসেনি, কেউ পেয়েছে কেউ পায়নি; কিন্তু নিজের মতো করে, সবার সঙ্গে আলাপ করে সুন্দর শৃঙ্খলবদ্ধভাবে ঠিক করে রাখলে, জানিয়ে রাখলে- তারাও শান্ত থাকে। কিন্তু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হয়।
ছেলে-মেয়েরা বই পাচ্ছে না এমন উদ্বেগ থেকে অনেকের মনে দ্বন্দ্ব, অশান্তির সৃষ্টি হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই অশান্তি নিরসনে আমাদের নিয়ম মেনে (বই বিতরণ) করতে হবে। নিয়ম মেনে দিলে মানুষ মানতে চায়, নিয়ম না থাকলে যত বিপদ। আমরা যেন নিজেরা নিয়মের ভেতরে থাকি, মানুষকেও জানাই- আমরা নিয়মের মধ্যে আছি।
পুলিশের যারা অপরাধে জড়িত তারা শাস্তির আওতায় আসবে
পুলিশের যারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। পুলিশের মনোবল বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটি বিষয় আমাদের প্রায় আলাপ হয় শান্তিশৃঙ্খলার বিষয়ে। পুলিশের ভূমিকা- তারা মনোবল হারিয়েছে, যেহেতু তাদের ওপরে অনেক অভিযোগ। অভ্যুত্থানের সময় যে ভূমিকা তারা পালন করেছে, সেজন্য তাদের উপর মানুষের ক্ষোভ। কাজেই তাদের মনোবল বৃদ্ধি, যারা দোষী- তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে। যারা নির্দোষ, তারা যেন নিñিদ্রভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যাতে কাজে প্রতিফলন হয়, সেই নির্দেশনাও দেন প্রধান উপদেষ্টা। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, মানুষ চায়- শান্তি শৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। সেটিতে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। সব মানুষ যেন মনে করে, সরকার আমাদের অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত করেছে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
কৃষক যেন বীজ, সার সংকটে না পড়ে
কৃষক যেন বীজ, সার সংকটে না পড়ে- কর্মকর্তাদের সেদিকেও নজর দিতে বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অভাব হওয়ার আগেই নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। উপরের সরকার, ঢাকার সরকার বোঝার আগে নিচের যারা- জেলার সরকার, তারা বুঝে ফেলে তাড়াতাড়ি। কাজেই উপরের সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া যে- এখানে না হলে বিপদ হবে। এ বিপদটি যেন না হয়। সবচেয়ে ভালো আগে থেকে নানাভাবে জানিয়ে রাখা এখানে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ। তিনি জানান, শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা বাকি চার বিভাগের ৩৩টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com
