অক্সফোর্ডের কিছু শিক্ষক মানুষের খুলির তৈরি পাত্রে মদ পান করতেন
প্রকাশ : ২৩-০৪-২০২৫ ১১:৪৫

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক মানুষের খুলির তৈরি পাত্রে মদপান করতেন—প্রকাশ হতে যাওয়া একটি বইয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বইটিতে লুট করা মানব দেহাবশেষ নিয়ে সহিংস ঔপনিবেশিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পিট রিভার্স জাদুঘরের বিশ্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কিউরেটর অধ্যাপক ড্যান হিকসের মতে, রূপাখচিত ও স্ট্যান্ডসংবলিত পালিশ করা এ খুলির কাপ ২০১৫ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ডের ওরচেস্টার কলেজের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে নিয়মিত ব্যবহৃত হতো।
অধ্যাপক হিকস তার প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ বইয়ে ‘মানব খুলির লজ্জাজনক ইতিহাস’ তুলে ধরেছেন।
এ প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেন, শিক্ষক ও অতিথিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমনরুমের আচার-অনুষ্ঠানের ইতি ঘটে। পরে ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ তাকে এই খুলির কাপের উৎপত্তি ও কীভাবে এটি ‘কিছু অসুস্থ ধরনের পানপাত্র’ হয়ে উঠল সে বিষয়ে তদন্ত করার আমন্ত্রণ জানায়।
হিকস বলেন, ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিতর্কে সাধারণত এই বিষয়ের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয় যে সিসিল রোডস বা এডওয়ার্ড কলস্টনের মতো নামকরা ব্রিটিশ, যারা এ উত্তরাধিকার থেকে লাভবান হয়েছেন, তারা কীভাবে তাদের নামাঙ্কিত মূর্তি, বস্তু বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
তবে হিকস দেখাতে চেয়েছেন, ঔপনিবেশিক শাসনের ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিচয় কীভাবে বর্ণবাদী ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও শ্বেত আধিপত্যবাদী ধারণার কারণে মাঝেমধ্যেই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে, সেই বিষয়টি। এটি কখনো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়নি। ঔপনিবেশিক শাসনের ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ও পরিচয় বিনষ্ট করার চেষ্টা সহিংসতার অংশ ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যার দেহাবশেষ থেকে ওই খুলির কাপ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি হিকস তার তদন্তে উদঘাটন করতে পারেননি। তবে কার্বন ডেটিং অনুযায়ী, এ খুলি প্রায় ২২৫ বছরের পুরোনো। তিনি বলেন, কাপের আকার ও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এ খুলি কোনো ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে এসেছে এবং সম্ভবত তা দাসত্বের শিকার কোনো নারীর।
ওই ভুক্তভোগীর পরিচয় উদঘাটন করা না গেলেও খুলির কাপের স্বত্বাধিকারীর পরিচয় ভালোভাবেই নথিভুক্ত রয়েছে। ১৯৪৬ সালে ওরচেস্টার কলেজকে কাপটি অনুদান হিসেবে দিয়েছিলেন জর্জ পিট–রিভার্স নামের সাবেক শিক্ষার্থী। কাপের রূপালি প্রান্তে তার নাম খোদাই করে লেখা আছে। ব্রিটিশ ফ্যাসিবাদী নেতা অসওয়াল্ড মোসলেকে সমর্থন করায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার অন্তরীণ করেছিল তাকে।
কাপটি জর্জ পিট–রিভার্সের দাদা ভিক্টোরিয়ান ব্রিটিশ সেনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক অগাস্টাস হেনরি লেন ফক্স পিট রিভার্সের ব্যক্তিগত সংগ্রহের অংশ ছিল। ১৮৮৪ সালে পিট রিভার্স জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ওই বছর সদবির নিলাম থেকে কাপটি কিনেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিক অগাস্টাস হেনরি। তখন কাপটির সঙ্গে একটি কাঠের স্ট্যান্ড ছিল, যেখানে রানি ভিক্টোরিয়ার ছবিসংবলিত একটি শিলিং বসানো ছিল। কাপটির রূপার অংশ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এটি ১৮৩৮ সালে অর্থাৎ রানির অভিষেকের বছর তৈরি করা হয়। কাপটির বিক্রেতা ছিলেন আইনজীবী ও অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের স্নাতক বার্নার্ড স্মিথ। তিনি মূলত প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র ও বর্ম সংগ্রহ করতেন। অধ্যাপক হিকসের ধারণা, তিনি তার বাবার কাছ থেকে কাপটি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। তার বাবা ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করতেন।
বৈজ্ঞানিক ও আইনি পরামর্শের ভিত্তিতে কলেজের পরিচালনা পর্ষদ খুলির তৈরি কাপটি তাদের আর্কাইভে সম্মানজনক পন্থায় সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে প্রবেশ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে লুট হওয়া মানুষের খুলি সম্পর্কেও অধ্যাপক হিকস তার বইয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com