weather ২৬.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুল্ক আরোপ ইস্যুতে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : ২৯-০৭-২০২৫ ১১:৩৯

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ ঠেকাতে ও শুল্ক হ্রাসে আলোচনার অবস্থান দৃঢ় করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ওয়াশিংটনে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় তৃতীয় দফা বাণিজ্য বৈঠকের প্রাক্কালে এই সিদ্ধান্তগুলোকে ‘উদ্দীপক’ বা আলোচনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে- এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ও বুধবার (৩০ জুলাই) ইউএসটিআরের সঙ্গে এ বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা ত্যাগ করেছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তার সঙ্গে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআর কার্যালয়ে, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এই বৈঠকে বাংলাদেশের দেওয়া অবস্থানপত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে দেশটি থেকে আমদানির উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, পাঁচ বছরের জন্য গম আমদানি, সয়াবিন ও তুলা আমদানি বাড়ানো, পাশাপাশি কৃষিপণ্য ও জ্বালানি খাতেও আমদানির পরিকল্পনা।

যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। এর আগে বাংলাদেশের ১৪টি বোয়িং অর্ডার ছিল। এবার অতিরিক্ত অর্ডারের মাধ্যমে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রয় সম্পর্ক আরো গভীর করা হয়েছে, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের একটি দৃশ্যমান বার্তা যায়। সচিব জানান, এসব উড়োজাহাজ সরবরাহে এক থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরো বড় পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে গম আমদানি। আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর সাত লাখ টন করে মোট ৩৫ লাখ টন গম কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এর আগে কখনো সরকারি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির নজির ছিল না। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

তুলা আমদানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকেছে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত, তবে পরে সেই পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। এখন আবারো আগের পরিমাণে তুলা আমদানির লক্ষ্যে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ ইতোমধ্যে আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছে। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা আমদানির পরিমাণ চার থেকে পাচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব এবং এজন্য নির্ধারিত কেন্দ্রীয় গুদাম স্থাপনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের বেসরকারি আমদানিকারকরা সয়াবিন ও ভোজ্যতেল আমদানির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ের বৈঠকের সমান্তরালে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা ব্যবসায়িক আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী পর্যায়ে একটি সমঝোতা তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য সচিব।

এইসব আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনার। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬০টি দেশের জন্য রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। তবে গত ৮ জুলাই তিনি ঘোষণা দেন, ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে- যা আগে ছিল ১৫ শতাংশ।

উচ্চ শুল্কহার কার্যকর হলে তৈরি পোশাকসহ দেশের বড় বড় রপ্তানিখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর আগে দুই দফা আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় এবার তৃতীয় দফার বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তবে সরকারি মহলের আশাবাদী অবস্থানের বিপরীতে বেসরকারি খাত ও অর্থনীতিবিদদের একাংশ এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় লবিস্ট নিয়োগে দেরি হওয়ায় সুফল পেতে সমস্যা হতে পারে। আর স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. এম. এম খালেদ মনে করেন, শুল্ক হার যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে সমতায় না আসে, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং সময় খুবই সীমিত।

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, ট্যারিফ ইস্যু এখন আর শুধু বাণিজ্যকেন্দ্রিক নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ও জড়িত হয়ে পড়েছে। সরকার যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক হলেও শুল্ক আলোচনার শর্তাবলি এখনও পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি, ফলে পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, আসন্ন তৃতীয় দফা বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে পণ্য আমদানির কৌশলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ একটি জটিল কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এই উদ্যোগ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার রক্ষা পাবে; অন্যথায় শুল্ক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রপ্তানিখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

ডাকসু নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চান উমামা ফাতেমা ডাকসু নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চান উমামা ফাতেমা রিয়াদ সোয়া ২ কোটি টাকার চেক নেন সাবেক এমপি থেকে রিয়াদ সোয়া ২ কোটি টাকার চেক নেন সাবেক এমপি থেকে ব্লগার অভিজিৎ হত্যা: জামিন পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শফিউর ফারাবি ব্লগার অভিজিৎ হত্যা: জামিন পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শফিউর ফারাবি এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে বিএনপি-ইসলামী আন্দোলন অপরাধী: জাপা ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে বিএনপি-ইসলামী আন্দোলন অপরাধী: জাপা