weather ২৪.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৮% , রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন আর নেই

প্রকাশ : ০৮-১১-২০২৫ ১১:০১

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

ডিএনএয়ের গঠন সম্পর্কে জেমস ওয়াটসনের যৌথ আবিষ্কার তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিল। তার এই আবিষ্কার ডিএনএ কীভাবে জিনগত তথ্য প্রতিলিপি করে ও বহন করে, সেসব ব্যাখ্যা করার দরজা খুলে দেয়। জীববিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।

নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি ডিএনএ বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসনের মৃত্যুর খবর বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে। এখানেই কয়েক দশক ধরে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৫৩ সালে ডিএনএয়ের ডাবল-হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কার করা বিজ্ঞানীদের একজন ওয়াটসন। এ জন্য তিনি ১৯৬২ সালে মরিস উইলকিন্স ও ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ওই সময় তারা তিনজন বলেছিলেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ওয়াটসন চলতি সপ্তাহে লং আইল্যান্ডের একটি হসপিস-এ (মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র) মারা যান।

তবে জাতি ও লিঙ্গ বিষয়ে করা মন্তব্যের কারণে ওয়াটসনের খ্যাতি ও সম্মান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক টিভি অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছিলেন, শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে গড় আইকিউ-এর পার্থক্যের পেছনে জিনগত কারণ রয়েছে।

এমনকি তরুণ বয়সেও, তিনি বিজ্ঞানের জন্য যতটা না পরিচিত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন নিজের লেখালেখি ও বেপরোয়া ভাবমূর্তির জন্য। নিজের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে তিনি নির্দ্বিধায় অন্য বিজ্ঞানীর তথ্যও ব্যবহার করেছেন।

ওয়াটসন একসময় বলেছিলেন, জাতি নিয়ে মন্তব্য করার কারণে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় তাকে 'একঘরে' করে দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

একসময় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে কাজ করা এই বিজ্ঞানী ২০০৭ সালে টাইমস পত্রিকাকে বলেছিলেন, তিনি আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে সহজাতভাবেই হতাশ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের সমস্ত সামাজিক নীতি এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে তাদের বুদ্ধিমত্তা আমাদের সমান, কিন্তু সমস্ত পরীক্ষা বলছে যে আসলে তা নয়।

এই মন্তব্যের জেরে তিনি নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে চ্যান্সেলরের পদ হারান।

২০১৯ সালে ওয়াটসন আবারও জাতি ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিলে গবেষণাগারটি তার সম্মানসূচক উপাধি চ্যান্সেলর ইমেরিটাস, অলিভার আর. গ্রেস প্রফেসর ইমেরিটাস ও অনারারি ট্রাস্টি বাতিল করে দেয়। ল্যাবরেটরিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ড. ওয়াটসনের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত নয়।

ডিএনএ ১৮৬৯ সালে আবিষ্কৃত হলেও এটি যে কোষের ভেতর জেনেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি, তা আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীদের ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এরপরও ডিএনএর প্রকৃত গঠন রহস্যই ছিল।

কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের তোলা ডিএনএর ছবি ব্যবহার করে ক্রিক ও ওয়াটসন অণুটির একটি বাস্তব মডেল তৈরি করতে সক্ষম হন। তবে ফ্র্যাঙ্কলিনকে না জানিয়েই তার তোলা ছবিগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। ক্রিক ও ওয়াটসনের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল জেতা মরিস উইলকিন্স ফ্র্যাঙ্কলিনের সঙ্গে ডিএনএ অণুর কাঠামো নির্ধারণে কাজ করেছিলেন।

জেমস ওয়াটসন ২০১৪ সালে নিজের নোবেল পদকের সোনার অংশটুকু ৪৮ লাখ ডলারে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। একজন রুশ ধনকুবের পদকটি কিনে সঙ্গে সঙ্গেই তা ওয়াটসনকে ফিরিয়ে দেন। ওই সময় এই বিজ্ঞানী বলেছিলেন, জাতি নিয়ে মন্তব্যের পর বিজ্ঞানীরা তাকে বয়কট করায় তিনি নোবেল পুরস্কারের সোনার অংশটুকু বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন।

ওয়াটসনের জন্ম ১৯২৮ সালের এপ্রিলে, শিকাগোতে। তার বাবা-মা, জেমস ও জিন, ছিলেন ইংরেজ, স্কটিশ ও আইরিশ বংশোদ্ভূত।

ওয়াটসন মাত্র ১৫ বছর বয়সে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি লাভ করেন। সেখানে তিনি ডিফ্র্যাকশন বা অপবর্তন নামক একটি নতুন কৌশলের প্রতি আগ্রহী হন। এ কৌশলে পরমাণুর উপর এক্স-রে ফেলে সেটির অভ্যন্তরীণ গঠন উন্মোচন করা হয়।

ডিএনএর কাঠামো নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে তিনি কেমব্রিজে যান। সেখানেই তার সঙ্গে ক্রিকের পরিচয় হয়। তারা দুজনে মিলে ডিএনএর সম্ভাব্য কাঠামোর বড় আকারের মডেল তৈরি শুরু করেন।

এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পর ওয়াটসন ও তার স্ত্রী এলিজাবেথ হার্ভার্ডে চলে যান। সেখানে তিনি জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই দম্পতির দুই পুত্র সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে একজন সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।

১৯৬৮ সালে ওয়াটসন নিউইয়র্ক স্টেটের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পুরোনো প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাকে।

ওয়াটসনের ১৯৬৮ সালের স্মৃতিকথা 'দ্য ডাবল হেলিক্স' একটি চটকদার ও খোলামেলা বিবরণ। এতে ওয়াটসন বর্ণনা করেন কীভাবে তিনি ও ব্রিটিশ পদার্থবিদ ফ্রান্সিস ক্রিক প্রথম ডিএনএর ত্রিমাত্রিক আকৃতিটি আবিষ্কার করেছিলেন। 

ক্রিক অভিযোগ করেছিলেন, বইটি মারাত্মকভাবে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে। আরেক সহকর্মী মরিস উইলকিনস বইটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, এ বই বিজ্ঞানীদের একটি 'বিকৃত চিত্র' তুলে ধরেছে, যেখানে বিজ্ঞানীদের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে, যারা আবিষ্কারের জন্য সহকর্মী ও প্রতিযোগীদের প্রতারণা করতেও আগ্রহী। 

এছাড়াও ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএর মডেল তৈরির জন্য এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফার রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক সমালোচমার শিকার হয়েছিলেন। তারা ফ্র্যাঙ্কলিনের অবদানকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেননি। 

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম’ ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম’ উত্তরার সড়কে ঝরল ভ্যানচালক যুবকের প্রাণ উত্তরার সড়কে ঝরল ভ্যানচালক যুবকের প্রাণ ১৬ মাস পর পাবনায় গেলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৬ মাস পর পাবনায় গেলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় ছাত্রদল নেতা সাম্য খুন : ডিবি গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় ছাত্রদল নেতা সাম্য খুন : ডিবি নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন আর নেই নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন আর নেই