weather ২৭.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৩% , শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না

প্রকাশ : ০৫-০৯-২০২৫ ২২:৫১

ছবি : সংগৃহীত

সিনিয়র রিপোর্টার
বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরি ও চোরাচালানের মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে গণপিটুনি বা মব ভায়োলেন্সের ক্রমাগত ঘটনা এবং আন্দোলনের নামে বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা। উদ্বেগজনকভাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরাও হামলার শিকার হচ্ছেন এবং নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক মাসে দেশে সহিংসতার মাত্রা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, থানা ঘেরাও, এবং মামলার হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। অপরদিকে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে যে সহযোগিতা প্রয়োজন, তা না পাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল ও সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। 

এদিকে কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না-তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সন্ত্রাস-সহিংসতা ও অপরাধ দমনে পুলিশ কার্যত পুরোদমে কঠোর ভূমিকা পালন করতে না পারার কারণেই মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার মুখ্য দায়িত্ব যে বাহিনীর, সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। গত এক বছর এক মাসে ৩৩৪টি গণসহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২১৯টিতেই ভিকটিম হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। আর থানা আক্রমণ হয়েছে ১২টি। আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫৭টি ঘটনায়। এ ছাড়া অন্যান্যভাবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে ১৫০টি। ছাত্র দেখলেই পুলিশের মনে এখনো ভয়ভীতি কাজ করে। 

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শতভাগ সফল হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, বতর্মান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কারো মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে চায় না। এ কারণে বেশির ভাগ সময়ই পুলিশ অ্যাকশনে যেতে পারে না। আর পুলিশের এই দুর্বলতার কারণে একের পর এক আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে অপশক্তি। 

সূত্রটি জানায়, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে মবসহ নানা অপরাধ দমনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিশেষ করে সংসদ-সদস্য, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাস্তব পরিস্থিতির কারণেই তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে অস্থিরতাসহ নানা অপরাধ দমন করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তৈরি করা সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে দুই হাজার ২১৬টি মামলা হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে দেশে ৪২৬টি ডাকাতি, ৬২৫টি অপহরণ, পাঁচ হাজার ৩৮৭টি চুরির ও ১০ হাজার ১০৯টি চোরাচালানের মামলা হয়েছে। 

মানবাধিকার সংস্থার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৪৯২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
 
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২৯টি, কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। এ সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ সাংবাদিক। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত হয়েছেন ছয় হাজার ৩৯০ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৮৮ জন নারী। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৮ জন। এছাড়া যৌতুক ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩৩ নারী। 

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ৮০টি। অন্যান্য মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি। তবে সবগুলো ঘটনায় মামলা বা জিডি হয়নি। চারটিতে নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং পাঁচটি ঘটনায় জিডি এন্ট্রি হয়েছে। এ ছাড়া ৩৩৪টি গণসহিংসতার মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঘটনাতেই ভিকটিম হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে ২৩ দশমিক ৯৫ ভাগ। আর অন্যান্য হামলার ঘটনা ঘটেছে ১০ দশমিক ৪৭ ভাগ। পুলিশের ওপর যেসব মব ভায়োলেন্স হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ২৬ দশমিক ০২ ভাগ ঘটনায়। থানা আক্রমণ ও ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ দশমিক ৪৭ ভাগ। আর অন্যান্যভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঘটনায়। পুলিশ আক্রান্তের দুই হাজার ১২৯টি ঘটনার মধ্যে ৩১৩টি ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ৩৫টি মবের ঘটনায় ৩৪টিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু ঘাটতি আছে সেই ঘাটতি কাজে লাগিয়ে নানা ভাবে মব, সহিংসতা, চাঁদাবাজি, সংঘাত-সহিংসতাসহ নানা অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে আরো বেশি অগ্রগতি হতে পারত।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের অনেক ক্ষোভ ছিল। তাই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় পুলিশ। এতে পুলিশ মানসিকভাবে ব্যাকফুটে চলে যায়। সেই সুবাধে অপরাধী ও সুযোগসন্ধানীরা তৎপর হয়ে উঠে। গত এক বছরে পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। দ্রুতই আরো উন্নতি হবে বলে আশা করছি। 

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ হাতকড়া-শিকল পরিয়ে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র হাতকড়া-শিকল পরিয়ে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক সংকট দ্রুত শেষ করতে ৪ হাজার বিজ্ঞানীর বিবৃতি গাজায় মানবিক সংকট দ্রুত শেষ করতে ৪ হাজার বিজ্ঞানীর বিবৃতি চড়া বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তি চড়া বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তি