ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ: এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা
প্রকাশ : ০১-০৭-২০২৫ ১২:৩২

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা প্রায় বন্ধ করে দেওয়ায় আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এক কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই শিশু।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই ভয়াবহ ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সহায়তা কার্যক্রমকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে স্পেনে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনের প্রাক্কালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।
এএফপি জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা তহবিলের ৪০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করত। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার দুই সপ্তাহের মাথায় তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক সগর্বে ইউএসএআইডি বন্ধ করার ঘোষণা দেন।
গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের (আইএসগ্লোবাল) গবেষক ডেভিড রাসেল্লা সতর্ক করে বলেন, অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য এই আর্থিক ধাক্কার প্রভাব হবে বৈশ্বিক মহামারি বা বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘাতের মতোই। রাসেলা আরো বলেন, এই তহবিল কেটে দেওয়ার ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে গত দুই দশকে স্বাস্থ্য খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা হঠাৎ থমকে যেতে পারে, এমনকি উল্টো দিকে ফিরে যেতে পারে।
১৩৩টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি অনুমান করেছে, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নয় কোটি ১০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করেছিল ইউএসএআইডি।
মার্কিন সরকার এ বছরের শুরুতে সহায়তার পরিমাণ ৮৩ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। এর প্রভাবে মৃত্যুর হার কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে, তা জানতে গবেষকেরা মডেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
এ থেকে গবেষকদের অনুমান, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে; যা প্রতিরোধযোগ্য। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৫ লাখের বেশি, অর্থাৎ বছরে প্রায় সাত লাখ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। এর ব্যাপকতা বোঝার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা ধরা যায়। ওই যুদ্ধে চার বছরে প্রায় এক কোটি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউএসএইড সহায়তাপ্রাপ্ত দেশগুলোতে মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ কমেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে এই হ্রাসের হার দ্বিগুণ, ৩২ শতাংশ। বিশেষ করে এই সহায়তা এইডস, ম্যালেরিয়া এবং উপেক্ষিত ট্রপিক্যাল রোগজনিত মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে।
তবে ইউএসএইড তহবিল কমানোর পর জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দাতা দেশও তাদের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট কাটার ঘোষণা দিয়েছে। আইএসগ্লোবালের ক্যাটেরিনা মন্টি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর এই তহবিল কর্তনের ফলে আগামী বছরগুলোতে আরো বেশি মৃত্যু হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যদি বৈশ্বিক সহায়তার প্রতিশ্রুত পরিমাণ বাড়ানো যায়, তাহলে এই মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব।
ইউএসএইডের তহবিল কর্তনের আগে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যয়ের মাত্র শূন্য দশমিক তিন শতাংশ ছিল। একজন সহলেখক বলেছেন, ‘মার্কিন নাগরিকরা প্রতিদিন প্রায় ১৭ সেন্ট ইউএসএইডে অবদান রাখেন; যা বছরে প্রায় ৬৪ ডলার। এই সামান্য অবদানের মাধ্যমে কোটি কোটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব, যা জানলে বেশিরভাগ মানুষ এই তহবিল চালু রাখার পক্ষে মত দিতেন।’ গবেষক রাসেলা বলেন, ‘এখনই তহবিল কমানোর নয়, বরং বাড়ানোর সময়।’
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com