weather ৩০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৪২% , বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কল্যাণময় বিশ্ব গঠনে মানবাধিকারের সুরক্ষা চাই

প্রকাশ : ২৩-০২-২০২৫ ১৮:৩৫

সোহেলী চৌধুরী

সোহেলী চৌধুরী

বিশ্বের যে কোন প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। মানবাধিকার হল সেই মৌলিক অধিকার যা প্রতিটি মানুষের জন্মগত, এবং এটি স্বাধীনভাবে বাঁচতে, মৌলিক সুযোগ সুবিধা পেতে, এবং নিরাপদ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ, সংঘর্ষ, দারিদ্র্য, ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারকে রক্ষা করা এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠন করা প্রতিটি রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।

বিশ্বের নানা স্থানে যখন যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ চলছে, সেখানে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। গাজা, মিয়ানমার, ইয়েমেন এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি তার সাক্ষ্য দেয়। এসব অঞ্চলে শান্তির জন্য সংগ্রামরত জনগণ প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে-এবং তা শুধু তাদের শারীরিক অবস্থা বা নিরাপত্তা সংকটই নয়, বরং তাদের মৌলিক অধিকার, যেমন খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিভিন্ন স্থানেই উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন কাটাচ্ছে। এমন পরিবেশে এক মানবিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে যা পৃথিবীজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

বিশ্বজুড়ে, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও, সম্পদের সঠিক বণ্টন এবং অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কিত সংকটগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই বিপুল সম্পদ অর্জন করছে অন্যদের অধিকার লঙ্ঘন করে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য গভীর হচ্ছে, এবং মানবাধিকার প্রশ্নে তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো, যেমন জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং বেইজিং নারী সম্মেলন, বিভিন্ন দেশের মধ্যে মানবাধিকার সুরক্ষার প্রয়াস চালাচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়।

জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থাগুলো প্রায় ২০০ বছর ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যমান। এর আগে, বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো বাস্তব আইন ছিল না। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের একটি ভালো জীবনযাত্রার জন্য মানবাধিকার অপরিহার্য। মূলত, মানবাধিকার কনভেনশন, ঘোষণা এবং আইন সবই বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের শালীন আচরণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।

বিংশ শতাব্দীর সমাজব্যবস্থায় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে প্রথম পাঁচ দশকের মধ্যে দুটি বিশ্ব মহাযুদ্ধ ঘটে। পরিণামে কয়েক কোটি নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। কোটি কোটি মানুষ যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়। কয়েক লাখ মানুষ আহত হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়। সবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম নমুনা।

বিশ্বশান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে কিছু রাষ্ট্র প্রথমবারের মতো মানবাধিকার সংরক্ষণ ও জীবনের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বজনীন বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার দলিল (৩০টি ধারা) ঘোষণা ও কার্যকর করে। ইতিহাসে এই দলিল ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস (ইউডিএইচআর) নামে সুপরিচিত।

জাতিসংঘ বিশ্বে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং সমাজের উপেক্ষিত, দুর্বল, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সম-অধিকার ও সমমর্যাদাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ১১টি জাতিসংঘ সনদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন কার্যকর করেছে; যা জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করে পালন করা।

জাতিসংঘের বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার দলিলের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না। মানবাধিকারের সর্বজনীন ওই ঘোষণাপত্রের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউকেই খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না। কিন্তু এসব ছাপিয়ে মানুষ মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলতে দেখি আমরা।

মানবাধিকার যখন সুরক্ষিত হয়, তখন সমাজে শান্তি, সমতা এবং উন্নতি প্রতিষ্ঠিত হয়। মানবাধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় আইন বা আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয় নয়; এটি প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্বও। মানুষের মৌলিক অধিকার যদি সুরক্ষিত থাকে, তবে তারা সমাজে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারে এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে সক্ষম হয়।

অর্থনীতি ও মানবাধিকারের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যখন একটি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতি ও মানবাধিকার একে অপরের পরিপূরক—একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সমৃদ্ধি ততটাই সার্থক হবে যতটা সেখানে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকলে মানুষ প্রকৃত অর্থে অর্থনৈতিক সুযোগ লাভ করতে পারে, যা সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে।

অতএব, একটি কল্যাণময় বিশ্ব গঠন করতে হলে মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ তা শুধু মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে না, বরং একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণের পূর্বশর্ত।

লেখক : সাংবাদিক ও অর্থ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে, ঈদ রবিবার সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে, ঈদ রবিবার বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছত্তিশগড়ে অভিযানে ১৬ মাওবাদী গেরিলা নিহত ছত্তিশগড়ে অভিযানে ১৬ মাওবাদী গেরিলা নিহত নাটোরে পুরাতন ডিসি বাংলোতে সংসদ নির্বাচনের ১০০ বস্তা ব্যালট পেপার নাটোরে পুরাতন ডিসি বাংলোতে সংসদ নির্বাচনের ১০০ বস্তা ব্যালট পেপার রবিবার জানা যাবে বাংলাদেশে কবে ঈদ রবিবার জানা যাবে বাংলাদেশে কবে ঈদ