weather ২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লার কচু ও লতি যাচ্ছে বিদেশে

প্রকাশ : ০৯-০১-২০২৫ ১৫:৩৯

ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কচু ও এর লতি বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে রপ্তানি আয়ে যোগ হচ্ছে অর্থ।

স্থানীয়রা জানান, এখানকার কচু ও লতি খেতে সুস্বাদু, গলায় ধরে না। ফলে চাহিদা বেশি। চাহিদার জোগান দিতে ১২ মাসই এখানে বাণিজ্যিকভাবে এই দুই সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা ঝুঁকছেন এই চাষে।

তারা আরো জানান, বরুড়ায় আগে ধান চাষ হতো। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় কৃষকেরা ধান চাষ কমিয়ে দেন। ২০১৫ সালের দিক থেকে কচু চাষে মনোযোগ দেন কৃষকেরা। যত দিন যাচ্ছে, এই সবজি চাষ বাড়ছে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তিন হাজারের বেশি কৃষক কচু ও লতি চাষ করছেন।

বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে উপজেলার মোট ১২০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কচুর চাষ হয়েছিল। বর্তমানে ২৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে কচু ও লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২৫ টন পর্যন্ত লতি হয়। সময়ভেদে এসব লতি টনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন কৃষকেরা। মূলত দুই জাতের কচুর চাষ বেশি হয়, লতিরাজ ও বারি পানি কচু-৩। লতিরাজ স্থানীয়দের কাছে লতিকচু নামে পরিচিত। এই কচু থেকে শুধু লতি সংগ্রহ করা হয়। আর পানি কচু থেকে মোটা সাইজের লতি, মূলসহ কচু সংগ্রহ করা হয়। একবার কচুর চারা রোপণ করলে বছরের আট থেকে নয় মাস প্রতিটি গাছ থেকেই লতি তোলা যায়। সাত দিন পরপরই লতি তুলতে পারেন কৃষকেরা। এই উপজেলায় প্রতিবছর বাণিজ্যিকভাবে ছয় হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন লতি উৎপাদন হয়।

উপজেলার আগানগর, ভবানীপুর ও খোশবাস দক্ষিণ— এই তিন ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে কচু ও লতির চাষ হয়। বাকি ১২টি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে চাষ হচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্য, কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে কচু ও লতির চাষ হয়।

উপজেলার আগানগর, বারাইপুর, মুড়াবাজাল, বিজয়পুর, জগদাশার, আটিওয়ারা, শরাফতীসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম খরচে বেশি লাভের কারণে কচু ও লতি চাষ বাড়ছে।

আগানগর গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ‘সাত বছর ধইরা ধান বাদ দিয়া কচু ও লতি চাষ করতাছি। তিন মাস আগে সাত গণ্ডা (৪২ শতাংশ) জমির মইদ্দে কচু লাগাইছি। খরচ হইছে ১৫ হাজার। এহন পর্যন্ত লতি বেচছি ১৮ হাজার টাকার। আরো ছয় মাস বেচন যাইব। পরে খেত চুক্তি কচু বেচমু। এক গণ্ডা আচ থেকে ১০ হাজার কইরা। আমরা উন্নত জাতের কচু লাগাই। আমরার কচু-লতি বিদেশেও যায়।’

বারাইপুর গ্রামের কৃষক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে প্রতি কেজি লতি বিক্রি করছি। লতি চাষের বড় সুবিধা হলো, সপ্তাহে এক থেকে দুবারও লতি বিক্রি করা যায়। আমি এবার ৪৫ শতাংশ জমিতে চাষ করছি, খরচ গেছে ৪০ হাজার। এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার বেশি লতি বেচছি। পাইকারেরা বাড়ি আইসা লতি লয়ে যায়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, খেত থেকে কচু ও লতি তুলে বাড়ি নিয়ে যান কৃষকেরা। সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে আঁটি বাঁধার কাজ করেন নারীরা। উপজেলায় এক হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় এসে কৃষকের বাড়ি থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত হয়ে এই পণ্য যায় রপ্তানিকারকদের হাতে।

শনি ও মঙ্গলবার বাদে বাকি দিনগুলোতে কচু ও লতির হাট বসে আগানগর ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামে। হাটে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর হতেই কৃষকদের কেউ কাঁধে ভার, কেউ মাথায় টুকরিতে করে, কেউ বাইসাইকেলের পেছনে, কেউ রিকশা ও ভ্যানে করে, আবার কেউ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে লতি নিয়ে হাটে আসেন। নানা জায়গা থেকে পাইকারেরাও আসতে থাকেন। বেলা দেড়টার মধ্যে হাট ভরে যায় লতিতে। অনেকে কচুও নিয়ে আসেন। বেলা দুইটা বাজতেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়।

কৃষক অহিদুল ইসলাম বলেন, যে লতি দেখতে সুন্দর, মোটা ও লম্বা, এগুলো বিদেশে যায়। এ জন্য এগুলোকে ‘সাপ্লাই মাল’ বলি।

ঢাকার পাইকার আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে বাসা ভাড়া নিয়ে বরুড়ায় থাকেন। এখান থেকে লতি ও কচু পাইকারি কিনে প্রতিদিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর আড়তে পাঠান। যেসব লতি ও কচুর মান ভালো, সেগুলো কয়েক হাত হয়ে রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে বিদেশে যায়।

বিজয়পুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তাঘাটের। প্রতিদিন বড় বড় ট্রাক আসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নানা জায়গায় কচু ও লতি নিতে। রাস্তাঘাট ভালো করা দরকার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বছরে বরুড়ায় উৎপাদিত ১৩৩ থেকে ১৪০ মেট্রিক টন লতি ও কচু বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে যায়। প্রবাসী বাংলাদেশি বেশি থাকেন, এমন দেশগুলোতে কচু ও লতির চাহিদা বেশি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি পরিমাণে এই দুই সবজি যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের নানা দেশেও রপ্তানি হয়। কৃষি বিভাগের হিসাবে বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার কচু ও লতি রপ্তানি হয়।

ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই পণ্য রপ্তানি হয়। তবে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিকারদের সংগঠন ‘চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের’ মাধ্যমে বরুড়ার লতি ও কচু সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। সংগঠনটির সহসভাপতি মো. ইসমাইল চৌধুরী চিটাগং ফুডস অ্যান্ড ভেজিটেবল নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৫ সাল থেকেই বরুড়ার পানি কচু ও লতি রপ্তানি করছি। ২০১১-১২ সালের পর থেকে ব্যাপক হারে রপ্তানি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিমানবন্দর হয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে যায় এই দুই পণ্য।’

রপ্তানিকারক মো. ইসমাইল চৌধুরী বলেন, ‘শুধু আমাদের সংগঠনের মাধ্যমেই বরুড়ার লতি ও কচু বছরে রপ্তানি হচ্ছে অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন। রপ্তানি মূল্য অন্তত ২৪ কোটি টাকা। আমাদের সংগঠনের বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই সবজি রপ্তানি করছে। আগের চেয়ে সবজির দাম যেমন বেড়েছে, উড়োজাহাজ ভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে চাহিদা থাকলেও আমরা বেশি পণ্য পাঠাতে পারি না। উড়োজাহাজ ভাড়া কমানো গেলে রপ্তানি আরও অনেক বেড়ে যাবে।’

মো. সাজিউল আলম নামের জয়পুরহাটের এক ব্যবসায়ী তার নিযুক্ত লোকের মাধ্যমে বরুড়ার কচু ও লতি সংগ্রহ করে ঢাকার কয়েকজন রপ্তানিকারককে সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন কচু ও লতি ঢাকার চার থেকে পাঁচটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করছি।’

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে আটক বিএসএফ সদস্যকে পতাকা বৈঠকে হস্তান্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে আটক বিএসএফ সদস্যকে পতাকা বৈঠকে হস্তান্তর বঙ্গবন্ধুসহ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়নি: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুসহ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়নি: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা তিন হাসপাতালে ১৮৫ আহত, চিকিৎসা প্রয়োজন মাত্র ১৭ জনের তিন হাসপাতালে ১৮৫ আহত, চিকিৎসা প্রয়োজন মাত্র ১৭ জনের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হলো পাঁচ দেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হলো পাঁচ দেশ হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো আজ হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো আজ