খামেনিকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম: ইসরায়েল কাতজ
প্রকাশ : ২৭-০৬-২০২৫ ১৬:৪৪
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত চলাকালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ এ কথা বলেছেন।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল থার্টিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতজ বলেন, আমরা খামেনিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটি করার যথাযথ সুযোগ পাওয়া যায়নি।
কাতজের দাবি, খামেনি তার ওপর হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন। আর সে কারণে তিনি ভূগর্ভের অনেক গভীরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন। প্রথম দফায় ইরানের প্রভাবশালী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) নেতাদের জায়গায় নিয়োগ পাওয়া সেনা কমান্ডারদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।
তবে যুদ্ধের সময় খামেনি কয়েকটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তিনি তার জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো প্রমাণ পায়নি আল জাজিরা। খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাত ভয়াবহভাবে বাড়ত। শুধু ইরানের ডি ফ্যাক্টো প্রধান হিসেবেই নয়, তিনি বিশ্বের কোটি কোটি শিয়া মুসলমানের কাছে একজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময় বলেছিলেন, এই যুদ্ধ ইরানে সরকার পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে। ট্রাম্প তো গত রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনও লিখেছিলেন, এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে ইরানকে আবারো মহান করে তোলা যাবে।
এদিকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন খবর আসছে। মূলত ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান— এই তিন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা চালানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাড়িয়ে বলছে।
এদিকে কাতজ বলেন, যদি দেখা যায় ইরান আবারো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সমৃদ্ধ করছে, তাহলে ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালাতে পারে। এ বিষয়ে ট্রাম্পও তাদের সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি এমন কোনো পরিস্থিতি দেখি না, যেখানে ইরান আবার তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুনর্গঠন করতে পারবে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার বলেছেন, এই যুদ্ধের ফলাফল এখন আরব দেশগুলোর সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক চুক্তির সুযোগ তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। এর আগে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার জবাবে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সেনারা অবস্থান করেন।
নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে লড়েছি এবং বড় বিজয় অর্জন করেছি। এই বিজয় আমাদের শান্তিচুক্তিগুলোর পরিসর আরো বড় করার পথ খুলে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরানও নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করেছে। তেহরান বলেছে, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার মতো তথাকথিত যেসব লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েল হামলা শুরু করেছিল, তা তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। ইরান আরো বলেছে, তাদের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। কারণ, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সর্বশেষ আয়াতুল্লাহ খামেনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইরানিদের একাধিকবার অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ইরান বিজয়ী হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে সজোরে চপেটাঘাত করেছে।
বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (প্রাক্তন টুইটার) ও টেলিগ্রামে দেওয়া পৃথক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। এই ভাষণে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মহান বিজয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং ইরানি জাতির ঐক্য ও দৃঢ়তা তুলে ধরেন।
খামেনি তার ভাষণে বলেন, আমাদের প্রিয় ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে। এই যুদ্ধে আমেরিকা কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইরান বিজয়ী হয়েছে এবং আমেরিকার মুখে সজোরে চপেটাঘাত করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়েছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল- যদি তারা না জড়ায়, তাহলে ইহুদিবাদী শাসনের সম্পূর্ণ পতন অনিবার্য হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com