গদখালীর ফুলচাষিরা খুশি
প্রকাশ : ৩০-১০-২০২৫ ১১:১৪
ছবি : সংগৃহীত
যশোর প্রতিনিধি
চাহিদা থাকায় মৌসুমের শুরুতে ফুলের ভালো দাম পাচ্ছেন ফুলের রাজধানী বলে খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ১৯ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করছেন তারা।
শীত আসছি আসছি করছে। প্রকৃতিতে এখন অন্যরকম এক আবহ। এই আবহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নানা রঙের বাহারি সব ফুল। কুয়াশার চাদর ভেদ করে প্রতিদিন ভোর থেকেই সেই ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, গাঁদা-সব রঙের, সব ঘ্রাণের ফুল উঠছে গদখালীর বাজারে। ক্রেতারাও আসছেন ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। চাহিদা থাকায় ফুলের দাম ভালো যাচ্ছে এবং এই বাজার দিন দিন আরও বাড়বে।
ফুল চাষি আব্দুল আজিজ বলেন, চলতি বছর বাজার খুব ভালো যাচ্ছে। সব ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগামী তিন-চার মাস ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাবে। প্রতি পিস গোলাপ পাঁচ টাকা, রজনিগন্ধা ১৪-১৬ টাকা, গ্লাডিওলাস আট থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে বর্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে, চাষিরা তা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
সোহরাব আলী নামে এক চাষি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজার অনেক ভালো। রজনিগন্ধা, ভুট্টা, গাঁদা, জারবেরা-সব ফুলেরই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে টানা বর্ষণে ফুলের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে গত দেড় মাসের পরিচর্যায় নতুন ফুল এসেছে। দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলে ফুলের দাম আরো বাড়বে, এতে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।
চাষি জামাল উদ্দিন বলেন, ফুলের দামে চাষিরা বেশ খুশি। এখন প্রতিদিনই ফুলের দাম বাড়ছে। বর্তমানের পাঁচ টাকা দরের গোলাপ ফেব্রুয়ারি মাসে আসতে আসতে ২০ টাকায় বিক্রি হবে।
ফুল চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমের শুরুতেই চলতি বছর ফুলের চাহিদা বেশি। আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছি। আশা করছি, খরচ বাদ দিয়ে এ বাগান থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাভ করতে পারব।
ঢাকা থেকে ফুল কিনতে গদখালীর বাজারে এসেছেন অনিক রহমান। তিনি বলেন, ‘গদখালীর বাজার সম্পর্কে আগে কোনো বাস্তব ধারণা ছিল না। এখানে এসে ফুল চাষীদের বেচাকেনার ধরন দেখে বেশ ভালো লেগেছে। ঢাকায় তুলনায় এখানে ফুলের দাম অনেক কম। ১০০ পিস গোলাপ ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। ১০০ পিস রজনিগন্ধা এক হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় এই ফুলের দাম অন্তত তিন গুণ বেশি। দরদাম করে বেশ সস্তায় কিছু ফুল কিনেছি।
ঢাকা থেকে আসা ফাহিম আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, অনুষ্ঠানের জন্য ফুল কিনতে এসেছি। ঢাকার বাজারের তুলনায় এখানে সব ধরনের ফুল বেশ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। চাইলে ভালো ফুল বেছে নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। চাষীদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, চাহিদার কারণে তারা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং খুশি।
সবুজ নামে এক অনলাইন ফুল বিক্রেতা বলেন, আমি ফুল সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। চাহিদা বেশি হওয়ায় আমরা যে দামে কিনছি, তাতে লোকসান হচ্ছে না। যারা কিনছেন, তারাও লাভে বিক্রি করছেন।
গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর বলেন, মৌসুমের শুরুতে সাধারণত ফুলের বাজার ভালো থাকে না। কিন্তু চলতি বছরের চিত্র ভিন্ন। বিগত বর্ষার কারণে ফুলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন কম। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ১৮-১৯ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করছেন চাষীরা। যতদিন যাবে বিক্রি আরো বাড়বে। এ দাম অব্যাহত থাকলে টানা বৃষ্টিতে হওয়া ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা ও তৎসংলগ্ন এলাকার চাষিরা প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ১১ প্রকারের ফুলের বাণিজ্যিক চাষ করেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com