গাজায় পুষ্টিহীনতায় নতুন করে ৬৬ শিশুর মৃত্যু
প্রকাশ : ২৯-০৬-২০২৫ ১২:২৪

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলি বাধার কারণে গাজায় বেড়েই চলেছে প্রাণহানি। পুষ্টিহীনতায় এ পর্যন্ত ৬৬ জন শিশুর প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর।
তারা বলছে, দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা ঢুকতে না দেওয়াই এই সংকটের প্রধান কারণ। রবিবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
শনিবার এক বিবৃতিতে দপ্তরটি বলেছে, ইসরায়েলের এই অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধ। এটি একপ্রকার ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত শিশু হত্যাকাণ্ড, যেখানে না খেতে দিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যু নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তারা আরো বলেছে, গাজার শিশুদের ওপর চলমান এই অপরাধ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের লজ্জাজনক নীরবতা— উভয়ই মানবতার প্রতি চরম অবহেলার পরিচয়।
গাজা কর্তৃপক্ষ এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য শুধু ইসরায়েলকেই নয়, বরং তার পশ্চিমা মিত্রদের— বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিকেও দায়ী করেছে। একইসঙ্গে, তারা জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে যেন অবিলম্বে গাজার সব সীমান্তপথ খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে জানায়, গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে। চলতি বছরের মে মাসেই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী অন্তত পাঁচ হাজার ১১৯ শিশুকে তীব্র অপুষ্টিজনিত সমস্যার কারণে ভর্তি করা হয়েছে।
আর এটি গত এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। মূলত ফেব্রুয়ারিতে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল এবং কিছু সহায়তা গাজায় প্রবেশ করেছিল।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক এদুয়ার বেইগবেদার বলেন, জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫০ দিনে ১৬ হাজার ৭৩৬ শিশু— অর্থাৎ দিনে গড়ে ১১২ জন শিশু— অপুষ্টির চিকিৎসা পেয়েছে। অথচ, এদের প্রতিটি ঘটনাই প্রতিরোধযোগ্য ছিল। খাদ্য, পানি, পুষ্টি — সবকিছুই সীমান্তে আটকে আছে। মানবসৃষ্ট সিদ্ধান্তের ফলেই এই মৃত্যু।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে অবিলম্বে সমস্ত সীমান্ত দিয়ে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
এদিকে শনিবার ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে; যার মধ্যে ২০ জন গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় নিহত হন। ওই এলাকায় টানা দুটি বিমান হামলায় একাধিক আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে যায়। মৃতদের মধ্যে নয় জন শিশুও রয়েছে।
মাহমুদ আল-নাখালা নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা শান্তভাবে বসে ছিলাম, হঠাৎ অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে — জানানো হয়, পুরো ব্লক ফাঁকা করে দিতে। এটি আল-নাখালা পরিবারের আবাসিক এলাকা। এখন দেখুন, পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুনিয়া সব দেখছে— শিশুদের মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ— তবু নীরব। এতখানি অমানবিকতা কীভাবে সম্ভব, আমরা আর কিছুই বুঝতে পারছি না।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে পারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পরও হতাহত চলছে। চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ট্রাম্প। তবে এনিয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
ট্রাম্পের এ মন্তব্যের পর যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল ও হামাস। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজেদ আল আনসারি বলেন, ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আবারো শুরুর চেষ্টা করছেন মধ্যস্থতাকারীরা।
এদিকে, ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এক লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিহতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গাজায় এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com