weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৪% , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত কেন হয়নি, আইন যা বলছে?

প্রকাশ : ১৯-০৭-২০২৫ ১২:৫৬

ছবি : সংগৃহীত

পিপলসনিউজ ডেস্ক
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার (১৬ জুলাই) ঘটনার দিনই চারজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরেকজন মারা গেছেন।

ঘটনার দিন যে চারজন মারা গেছেন, তাদের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করা হয়েছে।

তবে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। পাল্টাপাল্টি দাবি করেছে নিহতদের স্বজন, পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহতদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার দিন হাসপাতাল কিংবা প্রশাসন থেকে কোনো সহায়তা পাননি তারা। বাধ্য হয়েই ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন ও শেষকৃত্য করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

যদিও গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উচ্ছৃঙ্খল জনতার কারণেই মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। তারা আগেই মৃতদেহ নিয়ে গেছে।

পঞ্চম যে ব্যক্তি ঢাকা মেডিক্যালে মারা গেছেন, তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে কিনা- এ বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, তবে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ময়নাতদন্ত করার আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়নাতদন্ত করা না হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা অপরাধীদের সাজা দেওয়ার সুযোগটা কমে যাবে।

এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতেও ময়নাতদন্তের সুযোগ আছে বলে মনে করেন তারা।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যদি পুলিশ বলে যে আমাদের করতে দেয়নি পোস্টমর্টেম, তাহলে তারা এখন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে মরদেহ উঠিয়ে পোস্টমর্টেম করতে পারে।

তবে, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা–– পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

যা বলছে নিহতদের পরিবার: গোপালগঞ্জের এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোক। নিহতদের একজন রমজান কাজী। তার বাবা কামরুল কাজী বলেন, আমার ছেলের শরীরের এক পাশ দিয়ে বুলেট ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমার ছেলে কাজে গিয়েছিল। কাজ থেকে আসার সময় সবাই দেখতে গিয়েছিল, সেও গেছে। 

সংঘর্ষের দিন একজনের নিথর দেহ ভ্যানে করে নিয়ে যেতে দেখা যায় কয়েকজনকে।

ওই দিন চলন্ত ভ্যানটির পাশেই আহাজারি করতে দেখা যায় নিহত রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজীকে। সঙ্গে ছিলেন তার মামা কলিম মুন্সী।

কলিম মুন্সী বলেন, ঘটনার দিন রমজান আহত হওয়ার পর হাসপাতাল ও প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সহায়তা করেনি। কোনো দিক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। না হসপিটাল থেকে, না প্রশাসনের দিক দিয়ে। আমরা লাস্টে লাশ পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) ছাড়াই দাফন করছি। আমার ভাগ্নেরে আমি কষ্ট দেব না বলে আমরা দাফন করে দিছি।

তিনি দাবি করেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত না করার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের বলেছিল। তিনি বলেন, হাসপাতালে যারা ছিল, তারা কয় কি–– পোস্টমর্টেম হবে না, তোমরা নিয়ে চলে যাও। তারা আমাদের বিদায় করে দিয়েছে। 

গোপালগঞ্জের এই ঘটনায় যে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে আরেকজন সোহেল মোল্লা, তার বাড়িতেও চলছে আহাজারি। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা সোহেল মোল্লার মা লাইলি বেগম। নিহত সোহেলের বুকে, কাঁধে ও পায়ে তিনটি আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানান তার বাবা ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, বুকে ছিদ্র হয়ে গেছে। তিনটি গুলি ছিল।

সোহেল মোল্লার স্ত্রী নিশি বেগম দাবি করেন, আমার স্বামী ব্যবসা করতেন। কোনো অপরাধ করেননি। কেন আমার স্বামীকে গুলি করা হলো?

মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনিও। যদিও গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাসের দাবি, পরিবারের সদস্যরাই ময়নাতদন্ত না করে মরদেহ নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত করে দেবে না কেন? যেটি পুলিশ কেস হয়, সেটি আমরা অবশ্যই করে দেই।

গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্তের বিষয়টি উঠে এসেছে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনেও।

পুলিশের প্রতিবেদন অনযায়ী, উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চার জনের মরদেহ পোস্টমর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এর বাইরে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।

তবে শুক্রবার যার মৃত্যু হয়েছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত একজন শুক্রবার মারা গেছেন। তার নাম রমজান মুন্সী। সেখানকার আরও দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জানিয়ে ফারুক বলেন, এরা সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।

ময়নাতদন্তের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া কী: স্বাভাবিক মৃত্যুর বাইরে কাউকে হত্যা করা হলে সেটি একটি অপরাধ। আর এখানেই প্রয়োজন হয় পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্তের। যার মাধ্যমে অপরাধের ধরন, কীভাবে মৃত্যু হলো, এমন তথ্য পাওয়া যায় যা পরবর্তীতে বিচারকাজের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ৫ আগস্টের আগের অনেক ঘটনায় শোনা গেছে স্নাইপার রাইফেলে মারা গেছে। পুলিশের হাতে ছিল না। এখন যদি পোস্টমর্টেম হয় তাহলে বোঝা যাবে স্নাইপার রাইফেলে মারা গেলো নাকি। তখন কিন্তু পুলিশের হাতে মারা গেলো কিনা এটি বোঝা যাবে।

গোপালগঞ্জের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মনজিল মোরসেদ লেন, এখানেও বিষয়টি একই রকম, পুলিশের গুলিতে মারা গেল, নাকি আর্মির গুলিতে মারা গেল–বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার জন্য পোস্টমর্টেম দরকার ছিল। পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত করা না হলে কাউকে অপরাধী হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে আইনে সাজা দেওয়ার সুযোগটা কমে যাবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের সময় ময়নাতদন্ত না করে অপরাধীদের পার পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তারা।

মনজিল মোরসেদ বলেন, রাজনৈতিক বিতর্ক কিংবা আলোচিত ঘটনার বিচার অনেক বছর পরও করার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে রয়েছে।

তিনি বলেন, যদি পোস্টমর্টেম করা নাও হয়, সুরতহাল রিপোর্ট তো আর হবে না, এখনো কিন্তু তাদের কবর কোথায় আছে, সেখান থেকেও আদালতের নির্দেশে পোস্টমর্টেম করার সুযোগ আছে। সেটাও করতে পারে। 

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত যাদের ময়নাতদন্ত করা হয়নি তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- সেটি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সিরিয়া ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সিরিয়া ও ইসরায়েল কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার চুক্তি বাড়লো এক বছর কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার চুক্তি বাড়লো এক বছর গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত কেন হয়নি, আইন যা বলছে? গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত কেন হয়নি, আইন যা বলছে? ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত বেড়ে ২ ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত বেড়ে ২ অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়ে ধরা এসআই, পরে ক্লোজড অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়ে ধরা এসআই, পরে ক্লোজড