জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু
প্রকাশ : ১১-০৯-২০২৫ ১১:২৭

ছবি : সংগৃহীত
জাবি প্রতিনিধি
প্রায় ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ১০ হলে একযোগে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোট গ্রহণের জন্য ২১টি ভোট কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে ৬৭ জন পোলিং অফিসার (শিক্ষক) এবং ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোট গণণা করা হবে।
নির্বাচন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এক হাজার ৫০০ পুলিশ, সাত প্ল্যাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্ল্যাটুন আনসার ক্যাম্পাস এরিয়ায় মোতায়েন আছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে যে কোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবেলায় আনসার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন।
এদিকে, জাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে মীর মশরারফ হোসেন হল গেট এবং প্রান্তিক গেট ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গেট আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার ভাসমান দোকান, টারজান পয়েন্টের দোকান, পুরাতন পরিবহন সংলগ্ন দোকান, নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের দোকান, প্রান্তিক গেইটের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও গেইটের সকল দোকান এবং প্রধান গেইট সংলগ্ন সকল দোকান শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সকল হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন ও দোকান খোলা রাখা এবং পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা হতে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ (নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট) ব্যতীত সকল প্রকার মোটর সাইকেল চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এই সময়ে শুধুমাত্র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকার এবং নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। সকল স্টাফ বাস প্রান্তিক গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবশে করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ ফিরবে বলে আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বুধবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের জানান, জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে বিশেষ ওএমআর মেশিন। ফলাফল তাৎক্ষণিক সিনেট হলে বসানো বড় স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে এবং প্রতি ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আপডেট জানানো হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ দপ্তরের ফেসবুক পেজে ফলাফল ও নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে।
জাকসুতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী পাঁচ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ছয় হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী নয়জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আটজন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ছয়জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একেকটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৭৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। একজন করে প্রার্থী রয়েছে ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হবে।
জাকসুতে মোট সাতটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও তিনটি আংশিক প্যানেল রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম।
আংশিক প্যানেল দিয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ। এ ছাড়া অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
জাকসু নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ১০ আগস্ট। নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেশির ভাগ প্রার্থী গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির (হলের অতিথিকক্ষে আদবকায়দা শেখানোর নামে নির্যাতন) বিলোপ, আবাসনসংকট সমাধান, নিরাপত্তা, পরিবহন সমস্যার সমাধান, খাবারের মান উন্নত করা, শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, দলীয় প্রভাবের ছাত্ররাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com