দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম
প্রকাশ : ৩০-০৫-২০২৫ ২০:৫৪

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি— বেসরকারি বিনিয়োগ, গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার নেমে এসেছে মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশে; যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। করোনা মহামারিকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরের পর এই হার সবচেয়ে কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়া কেবল একটি পরিসংখ্যানগত ইঙ্গিত নয়, বরং এটি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নীতিগত দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এই সংখ্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা প্রতিফলিত করে। গ্যাসের সংকট, আমদানি জটিলতা, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট এবং ঋণের উচ্চ সুদের হার— সবকিছু মিলিয়ে ব্যবসার পরিবেশ দিন দিন প্রতিকূল হয়ে উঠছে।
বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৬-১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থার সংকট বিনিয়োগের গতিশীলতা কমিয়ে দিয়েছে।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ২৮ দশমিক দুই শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবণতা দেখে সেই লক্ষ্য এখন অনেকটাই দূরের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ২৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলার; যা বিনিয়োগ স্থবিরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। একই সঙ্গে, মার্চ মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র সাত দশমিক ৫৭ শতাংশ; যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক নিচে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের এই পতন কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিপজ্জনক সংকেত। এটি অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঋণের উচ্চ সুদহার এবং কাঠামোগত সংস্কারের ধীরগতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের হ্রাস কেবল একটি অর্থনৈতিক ইঙ্গিত নয়, বরং এটি দেশের সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। এই অবস্থায় টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, “প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ নতুন তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। বিনিয়োগ না বাড়লে বেকারত্ব আরো বেড়ে যাবে।
তিনি মনে করেন, বিনিয়োগ স্থবির হয়ে গেলে দেশের মানবসম্পদের সদ্ব্যবহার সম্ভব হবে না, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com