নেতানিয়াহু-পেজেশকিয়ানের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ, উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব
প্রকাশ : ১৪-০৬-২০২৫ ১২:৪৭

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সামরিক উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ী হামলার মধ্যে শুক্রবার (১৩ জুন) পৃথকভাবে দুই দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় এই সংঘাত নিরসনে রাশিয়ার পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে উভয় পক্ষকে কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পুতিন। ওই হামলায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের হামলা জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে। ইরানের রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে পুতিন জানান, রাশিয়া বিশ্বাস করে— এ ধরনের সংঘর্ষ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই বন্ধ করা সম্ভব। তিনি ইঙ্গিত দেন, পরমাণু প্রকল্পসহ যে সব বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে এবং এ প্রক্রিয়ায় রাশিয়া মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
পুতিন একইদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। ওই আলাপে তিনি নেতানিয়াহুকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তোলার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা এড়াতে হবে। তিনি ইসরায়েলকে শান্ত থাকা এবং কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহ্বান জানান। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান সম্ভব, যা শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নেতানিয়াহু পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে চলমান ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এবং ইসরায়েলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। অপরদিকে, রাশিয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান, বিশেষ করে ইরানের অভ্যন্তরে চালানো বিমান হামলা, তা তীব্রভাবে নিন্দনীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত আটটি শহরে বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়। ইরানের সামরিক সূত্র জানায়, এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৩০০ জন। হতাহতদের মধ্যে ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরিসহ সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। এই হামলায় মূলত ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু ছিল। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইসরায়েলের এই হামলায় ইরানের অন্তত ১০০টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইরানের পক্ষ থেকে হামলার প্রতিক্রিয়া দ্রুতই দেখা যায়। শুক্রবার রাতেই ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে, যার আওতায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এই পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে একজন নিহত হন এবং আহত হন অন্তত ৪১ জন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পাশাপাশি অনেক ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়েশিয়েল লেইটার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে ইসরায়েল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং তারা তাদের সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের হিসাব বলছে, আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে আমরা ইরানের পরমাণু প্রকল্প পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারব। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও বিশ্ববাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এটি আমাদের অবশ্যই করতে হবে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাবশালী একটি শক্তি এবং তাদের ইরান ও ইসরায়েল— উভয় দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার প্রস্তাব কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন উভয় দেশের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও একটি সহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি। এর অভাব হলে এই যুদ্ধ আরো দীর্ঘস্থায়ী ও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে, যার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com