বন্ধ রয়েছে ময়মনসিংহের চার জেলা থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল
প্রকাশ : ১২-১০-২০২৫ ১১:০২
ছবি : সংগৃহীত
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
শ্রমিক গ্রেপ্তার ও বাস বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহের চার জেলা থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
পুলিশ জানায়, হালুয়াঘাটের জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হান শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে বাসে ওঠার সময় পরিবহন শ্রমিক অরুণ ঝন্টুর শরীরে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় নিজেকে জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে রায়হান একাধিকবার দুঃখপ্রকাশ করার পরেও অরুণ ঝন্টু তার প্রতি অশালীন আচরণ ও কটূক্তি করে বাস থেকে নামিয়ে দেন।
এরপর রাত ৯টা থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকার ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের ইউনাইটেড সার্ভিসের কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিক অরুণ ঝন্টুকে আটক করে পুলিশ।
এর জেরে শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে পরিবহন শ্রমিকরা শহরের বাইপাসে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও জামালপুর থেকে ঢাকাগামী সব বাস সেখানে আটকা পড়ে।
পাশাপাশি ঢাকা থেকে ওই চার জেলাগামী গাড়িও বাইপাস এলাকায় গিয়ে আটকা পড়ে। এতে দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। উভয়পাশের যাত্রীরা সেখানে আটকে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। কেউ কেউ বাস থেকে নেমে গন্তব্যের পথে রওনা হন।
হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আবু রায়হান ‘সি’ ক্যাটাগরির জুলাইযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুটি টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলে বাসের স্টাফের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়। এ সময় বাসের অন্য যাত্রীরা ধমক দিলে বাসের স্টাফ নেমে যায়। আমরা সিটে গিয়ে বসার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বাসের স্টাফ সিটের কাছে গিয়ে আমার কলার চেপে ধরে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে বুকে ধাক্কা দেয়। আমি কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করতে করতে বাসটি আমাদের ছেড়ে চলে যায়।’
আবু রায়হান বলেন, এই ঘটনার পর আমি বাসের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা মালিকের নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করে। এরপর আমি ফেসবুকে লাইভ করলে আমার পক্ষে সহযোদ্ধারা এসে দাঁড়ালে মালিক হিসেবে শামীম সাহেবের নাম আসে। সে সাগর হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি। এখন পর্যন্ত তার বাসগুলো কীভাবে চলে, এর প্রতিবাদে আমরা অবস্থান কর্মসূচি করেছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দাবি ছিল, দোষীদের বিচারসহ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের জেলার সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমকে গ্রেপ্তার ও তার মালিকানাধীন ইউনাইটেড সার্ভিসের সব বাস বন্ধ রাখা। এই সার্ভিসে আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাস আছে।
অপরদিকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি ছিল, আটক শ্রমিককে মুক্তি দিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিক নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সিদ্ধান্ত হয়, আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাসের চলাচল বন্ধ থাকবে।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মাসকান্দা বাস কাউন্টার থেকে সরে যান। অপরদিকে পরিবহন শ্রমিকরাও বাইপাস থেকে অবরোধ তুলে নেন। তখন সেখানে আটকে পড়া বাসগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।
পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরপর ইউনাইটেড পরিবহনের ময়মনসিংহ কাউন্টারের প্রতিনিধিরা ঢাকায় মহাখালীতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন সেখান থেকে ইউনাইটেড ও সৌখিন পরিবহনের বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত আসে। ফলে অন্যান্য বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও এ দুটি পরিবহনের বাস চলাচল করেনি। রবিবার (১২ অক্টোবর) বিভাগের চার জেলা থেকে ঢাকাগামী সব বাসই বন্ধ রয়েছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com