weather ৩১.৯৯ o সে. আদ্রতা ৬৬% , বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশেষ ট্রেনে চীনে গেলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন

প্রকাশ : ০২-০৯-২০২৫ ১৬:১৭

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশেষ ট্রেনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চীনে গেলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। সেখানে তিনি একটি সামরিক কুজকাওয়াজে অংশ নেবেন।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণ উপলক্ষে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে যোগদানের জন্য কিম জং উনের ট্রেন সীমান্ত অতিক্রম করে চীনে প্রবেশ করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগদানের জন্য নির্ধারিত ২৬ জন বিশ্বনেতার মধ্যে কিমও রয়েছেন।

বেইজিংয়ের এই অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো কিম, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একই স্থানে একত্রিত হবেন।

রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত রোডং সিনমুন সংবাদপত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে কিমের ট্রেনটি উত্তর কোরিয়া-চীন সীমান্ত অতিক্রম করে।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি সূত্র ব্যবহার করে রোডং সিনমুন জানিয়েছে, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কমরেড কিম জং উনের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফরে তার সঙ্গে আছেন।

কিমের চীন সফরের ঠিক আগে চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শি এবং পুতিন পালাক্রমে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ওপর পশ্চিমা আধিপত্যের সমালোচনা করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি উত্তর কোরিয়া। পশ্চিম নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তার জন্য চীন এবং রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে আসছে।

পিয়ংইয়ং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কোর সঙ্গে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধকে সমর্থন করার জন্য হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে।

কিম খুব কমই বিদেশ ভ্রমণ করেন। তবে চীন প্রসঙ্গে তার কাছে ভিন্ন। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাঁচবার শির সঙ্গে দেখা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের কুচকাওয়াজের ফাঁকে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কিমের একাধিক গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক হতে পারে।

কেন ধীরগতির ট্রেনে ভ্রমণ করেন কিম, কী আছে ভেতরে: এদিকে বহু দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা বিশেষায়িত ধীরগতির বুলেটপ্রুফ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের তুলনায় এসব ট্রেন কেবল বেশি নিরাপদই নয়, বরং আরামদায়কও। বিশাল সফরসঙ্গী দল, নিরাপত্তারক্ষী, খাবার-দাবার এবং বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ এই ট্রেনেই সহজলভ্য।

দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ আহন বিয়ং-মিন জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে উত্তর কোরিয়া একাধিক ট্রেন ব্যবহার করে। প্রতিটি ট্রেনে থাকে ১০ থেকে ১৫টি বগি। এর কিছু বগি কেবল কিমের জন্য সংরক্ষিত, যেখানে শয়নকক্ষ, ব্যক্তিগত অফিস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য বগিগুলোতে অবস্থান করেন নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসক দল। এমনকি ট্রেনে রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং দুটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি বহনের সুবিধাও।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, সবুজ বগির বাইরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধূমপান বিরতি নিচ্ছেন কিম। ট্রেনের ভেতরে সোনালি প্রতীক খোদাই করা কাঠের দেয়ালঘেরা অফিসকক্ষে তাকে পতাকার সামনে বসা অবস্থায়ও দেখা যায়। তার টেবিলে থাকে সোনালি প্রতীকযুক্ত ল্যাপটপ, একাধিক টেলিফোন, সিগারেটের বক্স এবং পানীয় ভর্তি বোতল। জানালাগুলো সজ্জিত নীল-সোনালি পর্দায়।

২০১৮ সালে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কিম একটি প্রশস্ত বগিতে গোলাপি সোফায় বসে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনেও তাকে এই ট্রেনে যেতে দেখা গেছে। তখন ট্রেনের ভেতরে ফুলের আকারের আলোকসজ্জা এবং জেব্রা নকশার কাপড়ের আসবাব ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

রাশিয়ার সাবেক কর্মকর্তা কনস্তান্তিন পুলিকভস্কি তার বই অরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে কিম জং ইল-এর (কিম জং উনের বাবা) মস্কো সফরের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, সেই ট্রেনে ফ্রান্স থেকে আনা বোর্দো ও বোঝোলাই ওয়াইন পরিবেশন হতো, এমনকি জীবন্ত লবস্টারও সরবরাহ করা হয়েছিল।

২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে গেলে সীমান্তে কিমের ট্রেনের চাকাগুলো পুনঃসংযোজন করতে হয়েছিল, কারণ উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার রেলপথের গেজ আলাদা। তবে চীনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এমন জটিলতা নেই। সীমান্ত পার হওয়ার পর স্থানীয় চালকরা ট্রেন চালান, কারণ তারা রেলসিগন্যাল ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ভালো জানেন।

চীনে পূর্ববর্তী সফরগুলোতে কিমের ট্রেন সাধারণত চীনা তৈরির সবুজ রঙের ডিএফ১১জেড লোকোমোটিভ দিয়ে টানা হতো। ২০১৯ সালে ভিয়েতনামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে গেলে ট্রেনটি চীন অতিক্রম করেছিল লাল-হলুদ রঙের লোকোমোটিভে, যাতে ছিল চীনের জাতীয় রেলওয়ের প্রতীক।

গতি সম্পর্কে আহনের তথ্য অনুযায়ী, চীনের রেলপথে কিমের ট্রেন সর্বোচ্চ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলে, তবে উত্তর কোরিয়ার রেলপথে এ গতি সর্বাধিক ৪৫ কিলোমিটার।

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং কিম জং উনের দাদা কিম ইল সুং ১৯৯৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেনে বিদেশ সফর করেছেন। তার ছেলে কিম জং ইলও কেবল ট্রেনেই রাশিয়া সফর করেছিলেন তিনবার। ২০০১ সালে তিনি প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে মস্কো পৌঁছান।

২০১১ সালের শেষ দিকে এক ট্রেন সফরকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কিম জং ইল। বর্তমানে তার ব্যবহৃত বগিটি সমাধিসৌধে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এই ট্রেন উত্তর কোরিয়ার প্রচারণারও একটি অংশ। দীর্ঘ সফরের মাধ্যমে কিম পরিবার জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে। ২০২২ সালে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কিম জং উন দেশজুড়ে ক্লান্তিকর ট্রেন সফরে অংশ নিচ্ছেন এবং ভুট্টাক্ষেত পরিদর্শন করছেন, যেটিকে সরকার ‘কমিউনিস্ট ইউটোপিয়া’ প্রচারের অংশ হিসেবে তুলে ধরে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

৯ সেপ্টেম্বরেই হবে ডাকসু নির্বাচন: আপিল বিভাগ ৯ সেপ্টেম্বরেই হবে ডাকসু নির্বাচন: আপিল বিভাগ আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৫০২ প্রাণ, আহত ১২৩২ : বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৫০২ প্রাণ, আহত ১২৩২ : বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ডাকসুর নারী প্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতা আলী হুসেনকে বহিষ্কার করল ঢাবি ডাকসুর নারী প্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতা আলী হুসেনকে বহিষ্কার করল ঢাবি তিয়েনানমেনের প্যারেড : কিম-পুতিনকে নিয়ে যে বার্তা দিলেন সি তিয়েনানমেনের প্যারেড : কিম-পুতিনকে নিয়ে যে বার্তা দিলেন সি বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ঘিরে উত্তেজনা, সুন্দরগঞ্জে ১৪৪ ধারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ঘিরে উত্তেজনা, সুন্দরগঞ্জে ১৪৪ ধারা