বিসিবিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পথচলা কতটা মসৃণ হবে?
প্রকাশ : ৩১-০৫-২০২৫ ১০:৫০

ছবি : সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল। শুক্রবার (৩০ মে) তিনি বিসিবির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এরপরই শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। নতুন একজন নেতা হিসেবে কিছুটা সময় নেওয়া, কিছু সহজ প্রশ্ন আশা করাই স্বাভাবিক। কিন্তু শুরুতেই তার দিকে ছুটে আসে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন- প্রায় সবই বিব্রতকর। যাদের নিয়ে প্রশ্ন, তারা তখন ঠিক তার পাশেই বসে আছেন!
ঠিক একই চিত্র দেখা গিয়েছিল ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট- এই একই কক্ষে, একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে নতুন সভাপতি হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ফারুক আহমেদ। কিন্তু মাত্র নয় মাসেই তিনি হয়ে পড়েছেন একা। যাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব শুরু করেছিলেন, তারাই এখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগের ফলস্বরূপ, বছরের ঘরও ঘুরতে না ঘুরতেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে সভাপতির চেয়ার থেকে।
এখন একই প্রক্রিয়ায় সভাপতি হয়েছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক, আমিনুল ইসলাম। তার পাশেও দেখা গেল সেই পুরনো মুখগুলোকেই— হাসিমুখে, সদয় ভঙ্গিতে। প্রশ্ন জাগে, যাদের সঙ্গ ফারুককে একা করে দিয়েছিল, তারাই কি এবার আমিনুলকেও সেই একই পথে টেনে নিয়ে যাবে?
বিসিবির এই পুরনো মুখগুলোর মধ্যে রয়েছেন মাহবুব আনাম, যিনি দুই যুগের বেশি সময় ধরে বোর্ড পরিচালক। সরকার বা বোর্ডের নেতৃত্ব যতই বদলাক, তিনি কোনো না কোনোভাবে থেকে গেছেন। আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমানসহ আরো অনেকেই নাজমুল হাসানের দীর্ঘ নেতৃত্বকালে ছিলেন বোর্ডে।
তাদের ঘিরে বিতর্ক-অভিযোগের শেষ নেই। নানা সময়েই তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তারা বরাবরই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। এবার তারাই আবার মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন নতুন সভাপতি নির্বাচনে।
ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন নয় পরিচালকের আট জন। কেবল আকরাম খান তাতে স্বাক্ষর করেননি। অথচ চিঠিতে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, ঠিক সেসব অভিযোগ বহুবার উঠেছে এই পরিচালকদের বিরুদ্ধেই। কিন্তু তখন কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলেননি, প্রতিবাদ তো দূরের কথা! এই বাস্তবতায়, বোর্ডে পরিবর্তনের নামে আসলে কি বদল আসে? নাকি ঘুরেফিরে সেই পুরনো মুখগুলোর আধিপত্যই চলতে থাকে?
এই পটভূমিতে আমিনুলের সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে কিছু জ্বলন্ত প্রশ্ন, ‘আপনাকেও তো পেতে হচ্ছে কিছু বিতর্কিত চরিত্রকে। এদের সঙ্গে কাজ করতে হলে ম্যানেজ করার দক্ষতা দরকার। আপনি বিষয়টাকে কতটা গুরুত্ব দেন?’ ‘যারা একসময় আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, তারাই এখন আপনার পাশে। কেমন লাগছে?’ ‘আপনি যাদের বিরুদ্ধে অতীতে সোচ্চার ছিলেন, এখন তাদের সঙ্গেই কাজ করতে হবে। কীভাবে সামলাবেন?’ ‘যেহেতু আপনি এনএসসি মনোনীত, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রভাব কি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে?’
আমিনুল অবশ্য সরাসরি কোনো সমালোচনা করেননি। বরং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা একটা দল। আমার যাত্রা আজ থেকে শুরু। কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তবে চেষ্টা করব সবার অভিজ্ঞতা ও প্রাণশক্তি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে।’ তিনি বোর্ডের বাইরেও বরাবরই সত্য উচ্চারণে বিশ্বাসী ছিলেন বলে জানান। এখন ভেতর থেকে কাজ করে পরিবর্তন আনাই তার লক্ষ্য।
আমিনুল জানিয়ে দিয়েছেন, তার বিসিবিতে দীর্ঘমেয়াদে থাকার ইচ্ছা নেই। আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনাও তার নেই। যা তাকে আপাতত একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রাখে- রাজনৈতিক লড়াইয়ে না জড়িয়ে বোর্ডকে সৎভাবে পরিচালনার একটি সুযোগ তৈরি করে। ফারুক আহমেদ ঠিক বিপরীত পথে হেঁটেছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
তাতেই তার বিপক্ষে অবস্থান নেয় একদল পরিচালক। বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার রাজনীতিতে হেরে যান তিনি। আমিনুল ইসলাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসিতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। উন্নয়নমূলক কাজের অভিজ্ঞতা তার আছে। কিন্তু বিসিবির নেতৃত্ব- এ এক ভিন্ন ধরনের লড়াই। এখানকার রাজনীতি, স্বার্থের সংঘাত, বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিভাজন- সবই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও এখানে গুরুত্বপূর্ণ এক পক্ষ। তারাই ফারুক আহমেদকে এনেছিলেন বোর্ডে, আবার তারাই নয় মাসের মাথায় সরিয়ে দিয়েছেন। এমন রুদ্ধশ্বাস রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আমিনুল কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। একটি দল তখনই এগিয়ে যায়, যখন সবাই একসঙ্গে কাজ করে। কিন্তু এই দলেই যদি থাকে লুকানো প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাত, তাহলে সেই পথে হাঁটাও হয়ে উঠতে পারে কাঁটার বরণ।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com