মঙ্গলবার বহু কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন
প্রকাশ : ০৮-০৯-২০২৫ ১০:৫৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনমুখর হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু কাঙ্ক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। রবিবার ছিল নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন, দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি, নিয়েছেন শপথ।
কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি ১৮টি হল সংসদেও ভোট হবে একসঙ্গে। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৪৭১ জন প্রার্থী; যেখানে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৮টি কেন্দ্রীয় পদ এবং প্রতিটি হলে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি রয়েছে নানা অভিযোগ, গুজব ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। অন্যদিকে, কমিশন ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে নিচ্ছে একাধিক ব্যবস্থা, বাড়ানো হয়েছে বুথ সংখ্যা, নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনাও। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ দিচ্ছেন যুগোপযোগী ইশতেহার, কেউবা নারী অধিকার, সাইবার নিরাপত্তা ও সুশাসনের অঙ্গীকার করছেন।
তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা- একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গণতন্ত্রের চর্চা, নেতৃত্বের বিকাশ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বলা চলে পুরো দেশ। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে ৩৮তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ বা ডাকসু।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত অবস্থায় থাকলেই কেবল ভোটার হতে পারবেন। আর ভোটার হতে পারলেই তিনি ডাকসু বা হল সংসদে প্রার্থী হতে পারেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা- ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন; ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন ও ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫। ভোট কেন্দ্র আটটি। ভোটগ্রহণ হবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা। একজন ভোট দেবেন ৪১টি করে; কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি, হল সংসদে ১৩টি পদে। ডাকসুতে মোট প্রার্থী ৪৭১ জন; পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন ও নারী প্রার্থী ৬২ জন। পদের সংখ্যা ২৮টি। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৫ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়বেন ১৯ জন। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হওয়ার দৌড়ে আছেন ২৫ জন। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন; কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৪ জন; সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১৯ জন; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১২ জন; গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৯ জন; ক্রীড়া সম্পাদক ১৩ জন; ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১২ জন; সমাজসেবা সম্পাদক ১৭ জন; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ১৫ জন; মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক ১১ জন; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক ১৫ জন লড়বেন। আর ১৩ সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী ২১৭ জন।
এদিকে হল সংসদের সংখ্যা ১৮টি। মোট পদ ২৩৪টি। প্রতি হলে পদ সংখ্যা ১৩টি। ১৮ হলে মোট প্রার্থী ১ হাজার ৩৫ জন। ১৩ ছাত্র হলের প্রার্থী সংখ্যা ৮৫০ জন। আর ৫ ছাত্রী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৮৫ জন।
গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান কমিশনের: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
রবিবার বিকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন এ আহ্বান জানান। ব্রিফিংয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, কাজী মারুফুল ইসলাম, এস এম শামীম রেজা, সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীরও কথা বলেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গুজব একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনো ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু চারদিকে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের গুজব হতে পারেÑঅমুক প্রার্থী চলে গেছে, অমুক প্রার্থী আরেকজনকে সমর্থন করছে। তাই ছাত্রছাত্রীদের নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো গুজব ছড়ালে সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখবেন। সঠিক তথ্য জানতে চাইলে আমাদের কাছে আসবেন। কোনো গুজবে কান দেবেন না।’
‘নকল পরিচয়পত্র বানানো হচ্ছে’
নকল পরিচয়পত্র বানানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে সংবাদ আসছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোটকেন্দ্রে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কেউ ধরা পড়ে, তাকে সরাসরি পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে বৈধ ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারবেন।’
ভোটকেন্দ্রে বুথ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, বুথ সংখ্যা নিয়ে নির্বাচনের বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে শঙ্কা ছিল। আগে ৮ কেন্দ্রে ৭১০ বুথ ছিল। পরে সেটি বাড়িয়ে ৮১০ করা হয়েছে, যাতে আবাসিক-অনাবাসিক ভোটারদের কোনোভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হতে না হয়। রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে ভোট চাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের কোনো তথ্য কাউকে সরবরাহ করিনি। আমরা এমন অভিযোগ আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দপ্তরে খোঁজ নিয়েছি। ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাভিত্তিক গ্রুপ, বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত থাকে। সেখান থেকে ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়ে থাকতে পারে। এর সঙ্গে কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
‘ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট’
ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং যারা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ছাপিয়েছি।’
আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রচার শুরুর পর থেকে রবিবার পর্যন্ত আমরা যতগুলো আচরণবিধি-সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি, সব কটির বিষয়েই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে কোনোটিতে মৌখিক, কোনোটিতে মোবাইল ফোনে সতর্ক করেছি। আবার কোনোটি লিখিত আকারে সতর্ক করেছি। পাশাপাশি দুটি ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
আট বিষয়ে শপথ নিলেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা: ডাকসুতে নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আচরণে গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটানোসহ আট বিষয়ে শপথ নিলেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।
রবিবার বেলা ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বটতলায় প্রার্থীরা এই শপথ নেন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম এই শপথবাক্য পাঠ করান।
এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ ডাকসু ও হল সংসদের বিভিন্ন পদের ২০৫ জন প্রার্থী শপথবাক্য পাঠ করেন।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শপথপাঠ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম দফার শপথে বলা হয়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আনন্দময়, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো, ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেকোনো মূল্যে ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেওয়া হবে না। পূর্বসূরিদের মতো লড়াই চালানোর অঙ্গীকার করা হয় দ্বিতীয় দফার শপথে। এতে বলা হয়, যেভাবে তারা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪-এর জুলাইয়ের রক্তঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, যেভাবে তাদের অগ্রজেরা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা জনগণের মুক্তির পথ আবার কোনো কালোশক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, তারা সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
নারীদের সুরক্ষার কথা বলা হয় তৃতীয় দফার শপথে। এতে বলা হয়, বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করা হবে। যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সর্বোপরি ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।
বৈধ সিটের ব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয় চতুর্থ দফায়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে।
অনলাইন সুরক্ষা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হয় পঞ্চম দফায়। এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের জন্য তারা সাইবার বুলিং, মিস ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রত্যয় জানানো হয় ষষ্ঠ দফার শপথে। এতে বলা হয়, প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তারা শিক্ষা, গবেষণা, পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রম গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়োজিত রাখবেন।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয় সপ্তম দফায়। এতে বলা হয়, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তারা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখবেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবেন।
শপথের প্রতিটি শব্দ ধারণের অঙ্গীকার করা হয় শেষ দফায়। এতে বলা হয়, ‘আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই যে আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে মনেপ্রাণে ধারণ করি। এবং আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই প্রতিটি শপথ বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ।’
শপথপাঠ শেষে প্যানেলের পক্ষ থেকে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা আশা করছি, একটি সফল ডাকসুর প্রত্যাশা থেকে, একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয় থেকে শিক্ষার্থীরাও এই শপথের অংশীদার হবেন। আমাদের প্যানেলের প্রত্যেক প্রার্থীকে শিক্ষার্থীরা মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ও প্যানেলকে ভোট দিই। আমরা সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে গড়ে তুলি একটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও শিক্ষার্থীবান্ধব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
নির্বাচনের আগে শপথবাক্য পাঠ করানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘এবারের ডাকসুতে আমাদের স্লোগান হলো, প্রতিশ্রুতি নয়, অঙ্গীকারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজকে শপথে আমরা যে অঙ্গীকার করলাম, নির্বাচিত হলে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন।’
ডাকসু যার পক্ষেই যাক না কেন, রাজপথ আমাদের পক্ষেই থাকবে-মেঘমল্লার বসু: ডাকসু নির্বাচনে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেছেন, ডাকসু যার পক্ষেই যাক না কেন, রাজপথ আমাদের পক্ষেই থাকবে। শেখ হাসিনার আমলে রাজপথ আমাদের দখলে ছিল, ইউনূসের সময়ে আছি; রাজপথ আমাদের রক্তে রঞ্জিত, এই রাজপথ আমাদের দখলেই থাকবে।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ৯ তারিখের ফলাফল যাই হোক আমরা ইতোমধ্যেই জিতে গিয়েছি। জিতে গিয়েছি এই কারণেই যে বাংলাদেশে একটার পর একটা মাজার ভাঙা হয়, আমরা দেখতে পাই মৃত মানুষের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যখন আমরা দেখতে পাই একটার পর একটা মব আক্রমণ হয়, একটার পর একটা মোরাল পুলিশিং হয় তখন আমাদের উপস্থিতির কারণে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীদেরও বলতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাত বারোটার পর মেয়েদের হল ওপেন রাখতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীদেরও বলতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ধর্ম কেন্দ্রিক বিভাজন আর চলবে না।
তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে যখন টাকার খেলা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া দিয়ে প্রোমোট করা হচ্ছে, কারসাজি করা হচ্ছে, বড় বড় রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনারা যে নৈতিক লড়াই লড়ছেন সেই লড়াইয়ের ফল নয় তারিখে কী হবে তা জানি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি ৯ তারিখে আমরাই বিজয়ী হবো ।
প্রতিরোধ পর্ষদের ১১ নারী প্রার্থীর ১১ প্রতিশ্রুতি: ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ১১টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের ১১ নারী প্রার্থী, যেখানে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল গঠন এবং নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করার কথাও বলা হয়েছে। রবিবার বিকালে মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ‘নারী প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন তারা।
ইশতেহার পাঠ করেন প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক প্রার্থী নূজিয়া হাসিন (রাশা) এবং সদস্য প্রার্থী মিশকাতুল মাশিয়াত।
তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে= নারীবান্ধব আবাসন; অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য নিরসন; যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর কর; সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল গঠন করা; নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা।
ঋতুস্রাবের সময়ে ক্লাস-পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার ব্যাধবাধকতা থেকে মুক্তি; নারীদের শৌচাগারের অধিকার নিশ্চিত করা; নারীবান্ধব রিডিংরুম এবং কমনরুম নিশ্চিত করা এবং সেটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা; নারীবান্ধব ক্রীড়ার ব্যবস্থা কর; গবেষণায় নারীদের ইস্যুকে নিয়ে আসা; ডাকসুর কাঠামোকে নারীবান্ধব করা এবং কাঠামোতে নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
প্রতিরোধ পর্ষদ ব্যানারে লড়ছেন বামপন্থি সাত ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে— ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চ।
এ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়ছেন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির আহমেদ জুবেল।
প্রচারণায় বিধি লঙ্ঘনের ‘প্রতিযোগিতা’: ডাকসু নির্বাচনে ভোট বাড়াতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ‘প্রতিযোগিতা’ চলেছে প্রার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থিত প্যানেল এবং কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের ভোট আদায় করে নিতে হর হামেশাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রচারণার শুরুর দিকে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের পড়ার টেবিলে প্রচারণা থেকে শুরু করে শেষের দিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদের ক্লাসরুমে গিয়ে প্রচারণাসহ শিক্ষার্থীদের ভোট আদায়ে ব্যাপকভাবে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক টাকার ছড়াছড়ি করছেন প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ কয়েকটি দলীয় ছাত্র সংগঠন ও কতিপয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে। শিক্ষার্থীদেরকে হলে এবং হলের বাইরে খাওয়ানো, টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে উপঢৌকন দিয়ে ভোট আদায় করে নিচ্ছেন প্রার্থীরা।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com