মডেল মেঘনা কারাগারে : ২১ বছর পর ডিটেনশন আইনের প্রয়োগ
প্রকাশ : ১২-০৪-২০২৫ ১১:২৪

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই নির্দেশ দেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনায় ২১ বছর পর ডিটেনশন আইন প্রয়োগ করা হলো। একজন নারীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাড়াহুড়া করে রাতে এই আইনে আটক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মত তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে মেঘনাকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করা হয়। তখন তিনি ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তিনি নিজেকে নিরপরাধ দাবি করছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে আটকাদেশ দেন। পরে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক বার্তায় জানানো হয়, মডেল মেঘনাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করার কথা বলছে পুলিশ।
বার্তায় আরো বলা হয়, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার তার রয়েছে।
মেঘনাকে পুলিশ আটক করতে গেলে তিনি ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভ করেন। তিনি লাইভে জানান, তার দরজার বাইরে পুলিশ পরিচয়ধারীরা তাকে নিতে এসেছে। লাইভে তিনি শুরুতেই বলছিলেন, ‘বাসায় কিছু মানুষ আক্রমণ করেছে। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিচ্ছে। আমি বলেছি, থানায় এসে কথা বলব, তারা কথা শুনছে না।’
মেঘনা আলমকে দরজার বাইরে থাকা লোকেদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন। আমার ভয় পাওয়া তো স্বাভাবিক ... না? আপনারা যার কথায় এখানে এসেছেন ... তাকে কখনো আমি আমার বাসায় ঢুকতে দেইনি। আপনার তো আমাকে ফোন করে আসার কথা।’
তার দাবি, বাংলাদেশে নিযুক্ত একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কথায় পুলিশ তার বাসায় এসেছে। ভিডিওতে তিনি জানান, তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওপাশ থেকে দরজা খুলতে বলা হলে মেঘনা আলম বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাকে দরজা খোলার কারণ বলতে হবে। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট থাকতে হবে।’ ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিট হয়ে যায়।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন মেঘনা আলম। এদিকে মেঘনাকে আটক করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে অভিযোগ কিংবা মামলা ছাড়াই কাউকে আটক করার যৌক্তিকতা নিয়ে। আদালত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ গত ২১ বছর ধরে প্রয়োগ করা হয়নি। এটি ‘কালো’ আইন; যা এতদিন সুপ্ত অবস্থায় ছিল।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারবে। আবার এই আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন– এই আইনের নির্দিষ্ট ধারার ক্ষতিকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দেবেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে আটকাদেশ দেওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে– দেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি করা, দেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি করা, দেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা, আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা বা উৎসাহ প্রদান বা উত্তেজিত করা।
ক্ষতিকর আরও কাজ হচ্ছে– জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা, জনসাধারণ বা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করা।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, মেঘনার কার্যকলাপ ছিল দেশদ্রোহী। স্বষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। সে যে ধরনের নেতিবাচক কাজ করছিল, সেগুলো নিবৃত্ত করার জন্য এটি দেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, শুনেছি, অভিনেত্রী মেঘনা আলম তার বাসায় ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। এ সময় পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে আদালতে নিয়ে আসে। আমি যতটুকু জানলাম, তার বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বা ভয়ংকর কোনো অভিযোগ নেই। কেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে– সেটি তারা বলতে পারবে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ দেন জেলা প্রশাসক। এটি আদালতের ব্যাপার না। যে কোনো ফৌজদারি মামলাতে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। পরে আদালত নির্ধারণ করেন তাকে কোথায় পাঠাবেন। আদালতকে বাইপাস করার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছিল। ওই আইনের ভিত্তিই হলো– আপনি ক্ষতিকর বা ভাঙচুর কিছু করতে যাচ্ছেন, তবে আপনি কিছু করেননি কিন্তু।
সরকার যদি সন্তুষ্ট হয়, আপনি এসব খারাপ কাজ করতে উদ্যত হয়েছেন বা আপনাকে বাইরে রাখলে অপরাধগুলো হবে না, তাহলেই ডিটেনশন দিতে পারে। আর এটিতে কোনো জামিন হয় না। কারণ আদালত আপনাকে জেলে পাঠায়নি। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের পর থেকে জানামতে এই আইনটি আর প্রয়োগ হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা বা অভিযোগ ছিল না। যদিও তাকে কোনো কারণে গ্রেপ্তার করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ দফা (৫৪ ও ১৬৭ ধারা মতে) নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিবিধান প্রতিপালন করা অবশ্যই কর্তব্য। কোনো ব্যক্তির বাড়ি ভেঙে বা জোর করে ঢুকলে তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে, এই অভিনেত্রী বা মডেল মেঘনা আলম কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না। একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া অমানবিক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল; যা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারও বিশেষ ক্ষমতা আইনের এই খারাপ ধারাটি ব্যবহার করে কাউকে নিবর্তনমূলক আটক করেনি।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এখানে মেঘনা আলমের অপরাধের গভীরতা কতটুকু তা না জেনে এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তা ছাড়া তিনি একজন নারী। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। তাকে যদি আদালতে উপস্থাপন করতেই হয় তাহলে রাতে কেন, সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এত তাড়াহুড়ার কী ছিল।
প্রয়োজনে তার বাসা ঘেরাও করে রেখে কাজটা সকালে করতে পারত। দেশদ্রোহিতাসহ অনেক অভিযোগ হতে পারে, সেটি যাচাই-বাছাই করতে পারত। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কিনা, সেটি বুঝতে হবে। এমন কী অপরাধ করল যে একজন মহিলাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রাতেই আদালতে নেওয়া হলো। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তো সবই পারে– মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইন ১৯৫২, জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তফসিলি অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশকে প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিটেনশন আইনটি পাস করা হয়েছিল।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনায় ২১ বছর পর ডিটেনশন আইন প্রয়োগ করা হলো। একজন নারীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাড়াহুড়া করে রাতে এই আইনে আটক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মত তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে মেঘনাকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করা হয়। তখন তিনি ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তিনি নিজেকে নিরপরাধ দাবি করছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে আটকাদেশ দেন। পরে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক বার্তায় জানানো হয়, মডেল মেঘনাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করার কথা বলছে পুলিশ।
বার্তায় আরো বলা হয়, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার তার রয়েছে।
মেঘনাকে পুলিশ আটক করতে গেলে তিনি ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভ করেন। তিনি লাইভে জানান, তার দরজার বাইরে পুলিশ পরিচয়ধারীরা তাকে নিতে এসেছে। লাইভে তিনি শুরুতেই বলছিলেন, ‘বাসায় কিছু মানুষ আক্রমণ করেছে। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিচ্ছে। আমি বলেছি, থানায় এসে কথা বলব, তারা কথা শুনছে না।’
মেঘনা আলমকে দরজার বাইরে থাকা লোকেদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন। আমার ভয় পাওয়া তো স্বাভাবিক ... না? আপনারা যার কথায় এখানে এসেছেন ... তাকে কখনো আমি আমার বাসায় ঢুকতে দেইনি। আপনার তো আমাকে ফোন করে আসার কথা।’
তার দাবি, বাংলাদেশে নিযুক্ত একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কথায় পুলিশ তার বাসায় এসেছে। ভিডিওতে তিনি জানান, তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওপাশ থেকে দরজা খুলতে বলা হলে মেঘনা আলম বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাকে দরজা খোলার কারণ বলতে হবে। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট থাকতে হবে।’ ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিট হয়ে যায়।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন মেঘনা আলম। এদিকে মেঘনাকে আটক করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে অভিযোগ কিংবা মামলা ছাড়াই কাউকে আটক করার যৌক্তিকতা নিয়ে। আদালত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ গত ২১ বছর ধরে প্রয়োগ করা হয়নি। এটি ‘কালো’ আইন; যা এতদিন সুপ্ত অবস্থায় ছিল।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারবে। আবার এই আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন– এই আইনের নির্দিষ্ট ধারার ক্ষতিকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দেবেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে আটকাদেশ দেওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে– দেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি করা, দেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি করা, দেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা, আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা বা উৎসাহ প্রদান বা উত্তেজিত করা।
ক্ষতিকর আরও কাজ হচ্ছে– জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা, জনসাধারণ বা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করা।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, মেঘনার কার্যকলাপ ছিল দেশদ্রোহী। স্বষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। সে যে ধরনের নেতিবাচক কাজ করছিল, সেগুলো নিবৃত্ত করার জন্য এটি দেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, শুনেছি, অভিনেত্রী মেঘনা আলম তার বাসায় ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। এ সময় পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে আদালতে নিয়ে আসে। আমি যতটুকু জানলাম, তার বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বা ভয়ংকর কোনো অভিযোগ নেই। কেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে– সেটি তারা বলতে পারবে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ দেন জেলা প্রশাসক। এটি আদালতের ব্যাপার না। যে কোনো ফৌজদারি মামলাতে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। পরে আদালত নির্ধারণ করেন তাকে কোথায় পাঠাবেন। আদালতকে বাইপাস করার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছিল। ওই আইনের ভিত্তিই হলো– আপনি ক্ষতিকর বা ভাঙচুর কিছু করতে যাচ্ছেন, তবে আপনি কিছু করেননি কিন্তু।
সরকার যদি সন্তুষ্ট হয়, আপনি এসব খারাপ কাজ করতে উদ্যত হয়েছেন বা আপনাকে বাইরে রাখলে অপরাধগুলো হবে না, তাহলেই ডিটেনশন দিতে পারে। আর এটিতে কোনো জামিন হয় না। কারণ আদালত আপনাকে জেলে পাঠায়নি। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের পর থেকে জানামতে এই আইনটি আর প্রয়োগ হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা বা অভিযোগ ছিল না। যদিও তাকে কোনো কারণে গ্রেপ্তার করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ দফা (৫৪ ও ১৬৭ ধারা মতে) নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিবিধান প্রতিপালন করা অবশ্যই কর্তব্য। কোনো ব্যক্তির বাড়ি ভেঙে বা জোর করে ঢুকলে তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে, এই অভিনেত্রী বা মডেল মেঘনা আলম কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না। একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া অমানবিক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল; যা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারও বিশেষ ক্ষমতা আইনের এই খারাপ ধারাটি ব্যবহার করে কাউকে নিবর্তনমূলক আটক করেনি।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এখানে মেঘনা আলমের অপরাধের গভীরতা কতটুকু তা না জেনে এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তা ছাড়া তিনি একজন নারী। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। তাকে যদি আদালতে উপস্থাপন করতেই হয় তাহলে রাতে কেন, সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এত তাড়াহুড়ার কী ছিল।
প্রয়োজনে তার বাসা ঘেরাও করে রেখে কাজটা সকালে করতে পারত। দেশদ্রোহিতাসহ অনেক অভিযোগ হতে পারে, সেটি যাচাই-বাছাই করতে পারত। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কিনা, সেটি বুঝতে হবে। এমন কী অপরাধ করল যে একজন মহিলাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রাতেই আদালতে নেওয়া হলো। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তো সবই পারে– মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইন ১৯৫২, জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তফসিলি অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশকে প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিটেনশন আইনটি পাস করা হয়েছিল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com