মনোহরদীর বিষফোঁড়া কথিত সাংবাদিক শাকিল
প্রকাশ : ২৮-১০-২০২৫ ১৬:৪৯
ছবি : সংগৃহীত
নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় কাজী শরিফুল ইসলাম ওরফে শাকিল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া সাংবাদিকতা, চাঁদাবাজি, হুমকি ও তথ্য অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। তার বিষয়ে বিক্ষুব্ধ ও বিব্রত মনোহরদী উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক সমাজ, মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছেন। স্থানীয় স্বীকৃত গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরাও তার সাংবাদিকতার নামে অপ-সাংবাদিকতা ও অপ্রচারে নানাভাবে বিব্রত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-কে উদ্দেশ করে ‘বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে’ এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও তার পরিবার নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন শাকিল। স্থানীয়দের দাবি, ইউএনও তার অন্যায় দাবি পূরণ না করায় তিনি অপপ্রচারে লিপ্ত হন। এমনকি পূর্বেও বিভিন্ন ইউএনওর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অপপ্রচার করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ ‘মনোহরদীর বিষফোড়া ভূঁইফোড় সাংবাদিক শাকিল’। তিনি দেশের স্বীকৃত কোনো টিভি, পত্রিকা কিংবা অনলাইনে কাজ করেন না। ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে নানা বিভ্রান্তি, অপপ্রচার ছড়িয়ে সামাজিকভাবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে মানহানি করা তার নেশা। তিনি মানসিকভাবে বিকারগস্ত কিনা তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
মনোহরদী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান সোহাগ ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ বকুল সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শাকিল সাবেক শিল্পমন্ত্রীপুত্র মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীর ছত্রছায়ায় থেকে বেপরোয়া হয়েছেন। সে উপদ্রবই এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন মনোহরদীর জনগণ। তিনি মূলত আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক কর্মীর ভূমিকা পালন করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির বলয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও ছড়াচ্ছেন বিষোদগার। তার বিষয়ে নানা মহলে অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় যুবকেরা একাধিকবার গণধোলাই দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও নানা কারণে মামলা রয়েছে।
চন্দনবাড়ী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবু রায়হান ভূঁইয়া বলেন, সম্প্রতি কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু লেখা প্রকাশ করেছেন। এসব লেখার মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। একজন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসক হিসেবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানহানিকর। তার এই সাইবার আক্রমণের শিকার শুধু আমি একা নই। মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব, আইনগত পদক্ষেপ নেব।
মনোহরদী কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শাকিল কলেজের কমিটিতে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। তার দাবি পূরণ না হওয়ায় তিনি ইউএনও ও আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছেন, কুৎসা রটাচ্ছেন।
খিদিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আপন ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শাকিল সাবেক শিল্পমন্ত্রীপুত্র সাদীর ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আবারো চাঁদা দাবি করেন। না পেয়ে ফেসবুকে আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেন। শুধু আমি নই এমন অসংখ্য মানুষ তার কথামতো টাকা না দিলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেন তিনি।
স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাকিলকে কেউ সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। তারা বলেন, তার মতো অপসাংবাদিকের কারণে আমাদের পেশার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে অর্থ আদায় করাই তার মূল লক্ষ্য। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে তার এই সাইবার হামলার ভয়ে তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে।
মনোহরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও পৌর জামায়াতের আমির আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি হাতিচরে জাঁকজমকভাবে একজন সাবেক জেলা প্রশাসকের বোনের মেয়ে বিয়ে করেছি। অথচ কথিত সাংবাদিক কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল ওই বিয়ে নিয়ে মনোহরদী বাজার মসজিদের মুয়াজ্জিনকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। তার উদ্দেশ্য মানুষের বিরুদ্ধে কাল্পনিক পোস্ট দিয়ে সামাজিকভাবে মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা।
নরসিংদী জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুল, মনোহরদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুর রহমান সরকার দোলন সহ অসংখ্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেই যাচ্ছেন শাকিল।
শাকিলের বিরুদ্ধে পূর্বেও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলা হয়েছে বলে জানা যায়। এমনকি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তার বিরুদ্ধে প্রতারক হিসেবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানার মামলা নং ৪ (২ সেপ্টেম্বর ২০১৫), মনোহরদী থানার মামলা নং ৯/৭৯ (১২ এপ্রিল ২০২০) ও মনোহরদী থানার মামলা নং ৭/৭৬ (৮ আগস্ট ২০২২) রয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
সকল অভিযোগ বিষয়ে শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজেকে পিআইবি (প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ) থেকে পাশ করা সাংবাদিক দাবি করেন। মানুষকে হয়রানি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে ব্ল্যাকমেইল করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেন। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করেন তিনি।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ মুহাইমিন আল জিহান বলেন, বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com