মাচাদো জনগণের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার উৎসর্গ করলেন ট্রাম্পকে
প্রকাশ : ১১-১০-২০২৫ ১২:০১
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
‘একনায়কতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো তার পুরস্কারটি অংশত উৎসর্গ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বার বার দাবি করে আসছেন, এই পুরস্কার তারই প্রাপ্য।
নরওয়ের নোবেল কমিটির সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন শুক্রবার যখন ফোন করে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের খবর জানালেন, মাচাদো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হে ঈশ্বর… আমার বলার কিছু নেই।
সেই ফোনকলের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে নোবেল কমিটি।
মাচাদো বলেন, আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন, এটা একটা আন্দোলনের অর্জন, এটা পুরো সমাজের একটা সাফল্য। আমি কেবল একজন মানুষ। আমি একা এই স্বীকৃতির যোগ্য নই।
পরে এক এক্স পোস্টে এই নোবেলজয়ী লেখেন, আমি এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার ভুক্তভোগী জনগণের প্রতি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে, যিনি আমাদের আন্দোলনে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে গেছেন।
৫৮ বছর বয়সী প্রকৌশলী মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর সমালোচক। ২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার আদালত প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
ট্রাম্পও দীর্ঘদিন ধরে মাদুরোর কড়া সমালোচনা করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ এখনো মাদুরোর সরকারকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
গত ১২ বছর ধরে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় থাকা মাদুরো গত জানুয়ারিতে তৃতীয় মেয়াদের শপথ নেন। তাকে ধরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র পুরস্কার ঘোষণা করে রেখেছে।
মাচাদো যে তার পুরস্কার ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন, সে বিষয়ে একটি ফটোকার্ড সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে হোয়াইট হাউস।
সেই সঙ্গে নরওয়ের নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছে হোয়াইট হাউস, কারণ পুরস্কার ঘোষণার কয়েক দিন আগেই ট্রাম্প ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় লড়াই বন্ধের আলোচনায় সাফল্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং এক এক্স পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চুক্তি করছেন, যুদ্ধ শেষ করছেন, প্রাণ বাঁচাচ্ছেন… কিন্তু নোবেল কমিটি দেখাল, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়।
অন্যদিকে নোবেল কমিটি মাচাদোকে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যায় বলেছে, যখন স্বৈরাচারীরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যখন সিনেটর ছিলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মাচাদোর নোবেল জয়ের খবরকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটা ভেনেজুয়েলার জনগণের স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার স্পষ্ট প্রতিফলন।
তবে নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে, আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাচাদো উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ১২৪ বছরের ইতিহাসে বেশ কয়েকবারই এমন ঘটেছে। ১৯৭৫ সালে সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বী আন্দ্রেই সাখারভ, ১৯৮৩ সালে পোল্যান্ডের লেখ ভালেসা, ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের অং সান সু চি পুরস্কার নিতে অসলো যেতে পারেননি।
মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রথম নাগরিক, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতলেন। আর লাতিন আমেরিকায় তিনি ষষ্ঠ।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com