শত বছরের ঘাঘর নৌকার হাটে বেচাকেনা আগের মতো নেই
প্রকাশ : ১৩-০৭-২০২৫ ১২:২০

ছবি : সংগৃহীত
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য ঘের, সরকারি খাল-জলাশয় দখল ও প্রকৃতিগত নানা কারণে কমে গেছে নৌকার ব্যবহার। তাই উপজেলার নৌকা বিক্রির হাটগুলোতে হচ্ছে না আগের মতো বেচাকেনা।
সরেজমিনে উপজেলার শত বছরের নৌকার হাটে বিক্রেতাদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। নেই আগের মতো বাহারি ধরনের নৌকা। আগে যেখানে শত শত নৌকা নিয়ে বিক্রেতারা বসে থাকতেন, সেখানে এখন গুটি কয়েকজন বিক্রেতা। আগের চেয়ে বেচা-বিক্রি কম হলেও গত বছরের তুলনায় এ বছর নৌকার দাম বেশি বলে জানিয়েছে জাঠিয়া গ্রামের নরেশ বাড়ৈ।
তিনি বলেন, সুন্দরি ও লোহা কাঠের নৌকা পাওয়া যেত। একটি নৌকা কিনলে ১৫-২০ বছর ব্যবহার করতে পারতাম। এখন বেশির ভাগ নৌকা রেইন্ট্রি ও মেহগুনি গাছ দিয়ে তৈরী হয়। এ সব নৌকা এক বছরের উপর ব্যবহার করা যায় না। তাই গতবারের নৌকাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে এ বছর নতুন একটি নৌকা কিনতে এসেছিলাম। এখন দেখছি এ বছর দাম অনেক বেশি।
নৌকা বিক্রেতা গোপাল ঘরামী বলেন, কাঠ, লোহা ও বাড়ৈদের মুজুরি বৃদ্ধির কারণে আমাদেরকে বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া আগে যেখানে প্রতি হাটে ২০-৩০টি নৌকা বিক্রি করতাম এখন সেখানে প্রতি হাটে তিন-চারটি নৌকা বিক্রি করি। তাই খরচ পুষিয়ে নিতে আমাদেরকে এবছর একটু বেশী দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
অপর বিক্রেতা শ্যামল মন্ডল বলেন, খাল-বিল দখল, অপরিকল্পিত মাছের ঘেরসহ নানা কারণে এখন আর আগের মতো নৌকার ব্যবহার হচ্ছে না। তাই নৌকা বিক্রি কমে গেছে। শুধু মাত্র কিছু কিছু ঘের মালিক তাদের ঘেরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য নৌকা কিনছেন।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী সজল বালা বলেন, শত বছরে পুরোনো ঘাঘর নৌকার হাট নিয়ে নদীকেন্দ্রীক একটি সংস্কৃতিক বলয় তৈরী হয়েছিল। সেটি আর এখন নেই। পূর্বে দেখতাম খাল বিল দিয়ে গান গাইতে গাইতে নৌকা বেয়ে এই হাটে বিক্রেরা আসতেন। ক্রেতারা নৌকা কিনে তারাও একই ভাবে আনন্দ করতে করতে বাড়ি যেতেন। কিন্ত সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।
তিনি আরো বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও মাছের ঘের নির্মাণ এবং দখলদারিত্ব আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশকে হত্যা করেছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের আগামী প্রযন্মের জন্য কিছুটা হলেও নৌকার প্রচলন ধরে রাখা উচিৎ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমি প্রশাসনের দুষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ বলেন, নৌকা হচ্ছে এ জনপদের মানুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। এক সময় এ এলাকায় মানুষদের মাঝে নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার ছিল। কালের পরিক্রমায় নানা কারণে এই নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার কমে গেছে। তাই এ এলাকায় নৌকা তৈরী বা ব্যবহার বাড়াতে উপজেলা প্রশাসের কাছে যদি কেউ কোনো প্রকার সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com